বিষণ্নতা

মূল: স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ
বাংলাকরণ: সরদার মোহম্মদ রাজ্জাক

একটি সময় ছিলো যখন আমার জীবনের পথ ছিলো একেবারেই দুর্গম
যখন আমার তারুণ্যের চপলতা শুধুই দুঃখের ভেতর মিলিয়ে গিয়েছিলো
এবং আমার দুর্ভাগ্য সমূহকে মনে হতো কেবলই নিঃসার বস্তুর মতো
যখন আমার অলীক কল্পনাগুলি মিছেই আমাকে সুখের স্বপ্ন দেখাতো,
আমার চতুর্দিক থেকে জন্মিত প্রত্যাশালতা আমাকে বেষ্টিত করে
এবং সে প্রত্যাশার ফল মূল, পত্র পল্লব-
যার কিছুই আমার নয়, মনে হয় আমার মতো।
কিন্তু আমার শারীরিক দূর্বলতা, যন্ত্রণা
আমাকে পৃথিবীর কাছে নত করে দিয়েছে:
কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে,
তারা আমাকে আমার আনন্দোচ্ছ্বাস থেকে বঞ্চিত করতে পারবে।
কিন্তু আহ্ ! প্রতিটি ঈশ্বর প্রদত্ত উপদ্রব স্থগিত করে দেয়
আমার জন্ম লগ্নে প্রকৃতি যা আমাকে প্রদান করেছে-
আমার কল্পনাবৃত্তির অনুপম অধিত্বকে।
যেটিকে আমার আত্মিক অনুকৃতি বলেই মনে হয়
আমার কাছে।
সে সব কিছুর জন্যে নয়- যার প্রয়োজন আমি উপলব্ধি করি।
কিন্তু স্থির এবং ধৈর্যশীল হতে আমি সব কিছু করতে পারি
এবং আমার দুর্বোধ্য নিস্ফল ভাবনা আমাকে বাধ্য করে
আমার এলোমেলো সব শৃক্সক্ষলাহীন অনুমিত অনুসন্ধান দিয়ে আমার
নিজের প্রাকৃতিক আমিত্বকে নিজেই আত্মসাত করতে।
এবং সকল প্রাকৃতিক মানুষের ভেতর থেকেও
তাদের প্রকৃতিকে গ্রহন করতে আমাকে প্রাণিত করে-
এ কারণে যে, আমার প্রকৃতিকে আমি
তাদের সবার থেকে পৃথক ক’রে
নিজেই আমার নিজের মতো আপন করে নিতে চাই-
এটিই ছিলো আমার সর্বোচ্চ সম্পদ-
যেটি শুধু আমার নিজেরই পরিকল্পনা,
এখন পর্যন্ত সেটিই আমার চৈতন্যিক সমগ্রতাকে
আমার চিন্তন পরিধিতে সংক্রমিত করবার একটি অংশ।
এবং এখন যেটি আমার আত্মার আচরণকে প্রায়
পরিবৃদ্ধ করতে শুরু করেছে।
এবং এখনও আমি আমার চোখের কত গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি
শুন্যে ভেসে থাকা সেই সব ক্ষীণ মেঘের
হালকা, পাতলা আবরনের বাধা উপেক্ষা করে,
যারা তাদের ভাবনাগুলিকে নক্ষত্র ম-লির কাছে সমর্পণ করেছে,
সেই সব নক্ষত্র ক্রমাগত ভেসে চলেছে
তাদের ভেতরে এবং নেপথ্যে,
এখন সেগুলি বুদ্বুদের কণার মতো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে
কিন্ত নিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে!
অদূরের এক ফালি চাঁদ এমনভাবে স্থির হয়ে রয়েছে
যেন জন্ম লগ্নেই এটি স্থির হয়েই ছিলো
যেখানে মেঘহীন, তারকা বিহীন, নীল সরোবরে স্থির জন্মিত ব’লে!
একটি পাল তোলা জাহাজ
যেটি সামান্য বাতাসের অভাবে
তোমাদের সুখ-সিক্ত কল্পনার আকাশে গতিহীন হয়ে পড়েছিলো।
আমি তাদের সবকিছুই দেখি-
কত সুন্দর ওরা!
কিন্তু আমি শুধু দেখিই, অনুভব করতে পারি না-
কী বিপুল সৌন্দর্যের আধারই না ওরা!

চলতি সংখ্যা