পয়স্তি ম্যাগাজিন

বই পর্যালোচনা: ‘যে যার বৃত্তে’ – রোকন রেজার গল্পগুচ্ছ

বই পর্যালোচনা: ‘যে যার বৃত্তে’ – রোকন রেজার গল্পগুচ্ছ

সমকালীন বাংলা সাহিত্যের তরুণ লেখকদের মাঝে রোকন রেজার নাম যেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তাঁর লেখার প্রবাহ এক ধরনের সুরেলা মাধুর্যে পূর্ণ, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় গল্পের গভীর থেকে গভীরতর স্তরে। অমর একুশে ২০২৫ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘যে যার বৃত্তে’ যেন এক বিস্ময়কর দর্পণ, যেখানে সমাজের প্রতিচ্ছবি খেলা করে। বইটি প্রকাশ করেছে ‘এবং মানুষ প্রকাশনী’। গ্রন্থটিতে রয়েছে আঠারোটি গল্প, প্রতিটি যেন একেকটি চিত্রপট—রঙিন, তীব্র, সংবেদনশীল।

গল্পের বৈচিত্র্য ও বিষয়বস্তু

‘যে যার বৃত্তে’ গল্পগ্রন্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য। প্রতিটি গল্প যেন একেকটি ক্ষুদ্র জগৎ, যেখানে মানুষের চেনা-অচেনা অনুভূতি বাঁধা পড়েছে শব্দের জালে। মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর জীবনের অনিবার্য সংগ্রাম এখানে সূক্ষ্ম তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

গল্পগুলো কখনো কঠিন বাস্তবতার নির্মম চিত্রায়ণ, কখনো বা কল্পনার মায়াজাল। এগুলো কেবল ঘটনাপ্রবাহ নয়, বরং জীবনের গভীরতম উপলব্ধির অনুরণন। পাঠকের হৃদয়ে এ গল্পগুলো প্রতিধ্বনিত হয়, তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিশে যায়।

লেখনীর শৈলী

রোকন রেজার গদ্য যেন ঝরনা ধারা—স্বচ্ছ, অনিবার্য এবং একটানা প্রবহমান। তাঁর লেখনী কখনো ব্যথাতুর, কখনো ব্যঙ্গাত্মক, আবার কখনো মায়াময়।

‘টান’ গল্পটির কথাই ধরা যাক। এখানে লেখক এমন কিছু মুহূর্ত সৃষ্টি করেছেন, যা পাঠককে এক গভীর আবেগের জগতে নিয়ে যায়। ভাষার সাবলীলতা এবং সংলাপের স্বাভাবিকতা গল্পটিকে বাস্তবতার আয়নায় পরিণত করেছে।

এ বইয়ের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো সংলাপের প্রাণবন্ততা। কথোপকথনে কোনো কৃত্রিমতা নেই, বরং চরিত্রগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠস্বর সেখানে ধ্বনিত হয়।

আবেগ ও নস্টালজিয়ার মিশেল

‘যে যার বৃত্তে’ কেবল গল্পগ্রন্থ নয়, এটি এক আবেগের সমুদ্র। এখানে নস্টালজিয়া কখনো পুরনো দিনের ভালোবাসা হয়ে আসে, কখনো বা একাকীত্বের বিষণ্ন সুর বয়ে আনে। প্রতিটি গল্প যেন সময়ের এক ক্ষুদ্র ফ্রেম, যেখানে অতীত আর বর্তমান মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

সমাজের চিত্রায়ণ

এই গল্পগুলো আমাদের পরিচিত সমাজের আয়না। রোকন রেজা তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে মধ্যবিত্ত জীবনের ক্লান্তি, স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ এবং আশা-নিরাশার দোলাচল ফুটিয়ে তুলেছেন। দারিদ্র্য, সামাজিক অনাচার, মানুষের না-বলা কষ্ট—সবই ধরা দিয়েছে তাঁর শব্দের সুনিপুণ ছন্দে।

গল্পগুলো পাঠককে শুধু বিনোদন দেয় না, বরং এক গভীর আত্মোপলব্ধির দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিটি বাক্যের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে এক অনুচ্চারিত প্রশ্ন, যা পাঠককে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

গল্পের গঠন ও বিন্যাস

গল্পগুলোর গঠন অত্যন্ত সুসংগঠিত। লেখক অল্প কথায় বিশাল অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম। প্রতিটি গল্পের সূচনা পাঠকের কৌতূহল জাগিয়ে তোলে, আর শেষে অপেক্ষা করে এক অনিবার্য বিস্ময়। গল্পের বাঁকগুলো এতটাই স্বাভাবিক ও প্রাঞ্জল যে, পাঠক এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন বোধ করেন না।

‘যে যার বৃত্তে’ শুধু গল্পের সংকলন নয়, এটি এক জীবনদর্শন। রোকন রেজার লেখনীর গভীরতা, সংবেদনশীলতা এবং শিল্পগুণ এটিকে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল সংযোজন করেছে।

যারা সাহিত্যের রসে ভিজতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ‘যে যার বৃত্তে’ নিঃসন্দেহে এক অনবদ্য সংগ্রহ। এটি শুধু পাঠকদের আনন্দ দেবে না, বরং তাদের চিন্তায়, অনুভূতিতে এবং আত্মোপলব্ধিতে স্থায়ী ছাপ ফেলবে।

এই বইটি আপনার হৃদয়ের একান্তে জায়গা করে নেবে, ঠিক যেমন একটি ভালো গল্প আমাদের মনে দীর্ঘদিন থেকে যায়।

যে যার বৃত্তের বইটি কিনতে পারবেন রকমারি থেকে। বইটি কিনতে লিংকে ভিজিট করতে পারেন।

রকমারি লিংক: https://rkmri.co/ym25l0A2ymMl/

পয়স্তি ম্যাগাজিন
পয়স্তি বাংলা তরুণ সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পয়স্তি মনে করে আজকের তরুণ লেখকরাই আগামি দিনের প্রাজ্ঞ সাহিত্যিক হয়ে উঠবেন। আর এই বিশ্বাসের ‍উপরেই পয়স্তি নতুন লেখকদের সব থেকে বড় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে চায়।
বার পড়া হয়েছে
প্রকাশিত :
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
শেয়ার :
পয়স্তিতে যারা লিখেছেননির্দেশিকাশর্তাবলী
১০ দিনে জনপ্রিয় লেখক
magnifiercrossmenu