চৈতি দাস অদিতি

শৈশবের বিজয় দিবস

সকালটা কেমন জানি আজ অদ্ভূত লাগছে। মনে হচ্ছে সব কেমন শান্ত, স্বাধীন। আরে! আজ তো বিজয় দিবস। তার জন্যই বোধহয় প্রকৃতিও নিজের স্বাধীনতার বর্হিপ্রকাশ করছে। চারদিক থেকে  যেন জানান দিচ্ছে আজ বিজয় দিবস। আমার এখনও বেশ ভালোভাবেই মনে আছে ক্লাস ওয়ানের কথা। বিজয় দিবস কী তা আমার প্রথম বুঝতে পারা! ১৫ই ডিসেম্বর স্কুল থেকে বলা হয়েছিল ১৬ ই ডিসেম্বর স্কুলে যাওয়ার জন্য। আমি সকাল সকাল ঘুৃম থেকে উঠে পড়ি। তখন বাবাকে দেখি কতগুলো ছোট ছোট পতাকা বারান্দায় লাগাচ্ছিল। আমি বাবাকে বেশ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করি,
-বাবা, এগুলো কেন লাগাচ্ছ?
-আজ বিজয় দিবস, তা তো তুমি জানো।
-হ্যাঁ, বাবা।
-অনেক কষ্টের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তার জন্যই পুরো বাংলাদেশের মানুষ এ দিনটিকে জাঁকজমকের সাথে পালন করে। সেজন্য আমিও বিজয় দিবসকে যতটুকু পারি নিজেরমত করে পালন করি।

বাবার কথা শোনার পর চলে গেলাম গোসল করতে। গোসল করে নতুন জামা পড়ে স্কুলের দিকে রওনা হলাম। স্কুলের গেইটে প্রবেশের সাথে সাথে মনটা কেন যেন আনন্দে ভরে উঠল। স্কুলের পুরো দেয়াল, মাঠ সব খানেই ছোট ছোট লাল-সবুজের পতাকার সাজ। এর মধ্যেই র‌্যালি, কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে এলাম। বাসায় এসে দাদিকে স্কুলের গল্প শুনাতাম। এভাবেই কেটে গেল ছোটবেলার বিজয় দিবস। কখনও কখনও সারারাত ধরে কাগজের পতাকা দিয়ে ছাদে স্মৃতিসৌধ বানাতাম, দুপুরে চড়ুইভাতি খেলতাম আর সন্ধ্যা হলেই বাবার হাত ধরে বিজয় মেলায় যেতাম। এমনিভাবে কেটে গেল প্রাইমারি স্কুলের বিজয় দিবস।

যখন হাই স্কুলে উঠলাম তখন বিজয় দিবসে ডিসপ্লেতে এটেন্ড করতাম। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই ডিসপ্লের জন্য রিহার্সাল শুরু হতো। নিজেদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন হতো। কারণ যারা ভালো করত তারাই সামনে থাকত। আর আগেরদিন রাতে খুব চিন্তায় থাকতাম। কত মানুষের সামনেই না করতে হবে! তাই রাতে স্কুল ড্রেসটা বারবার দেখতাম, কোনো দাগ আছে কিনা? কোথাও কুঁচকে আছে কিনা? ভোর বেলা স্কুলে যাওয়া, সেখান থেকে স্টেডিয়াম। তখনই বিজয়ের আনন্দটা বুঝা যেত। এখন তো বড় হয়ে গেছি। শৈশবের মতো করে বিজয় দিবস পালন করা হয় না।

© চৈতি দাস অদিতি

magnifiercrossmenu