শাহনেওয়াজ বিপ্লব

উপনিবেশ

এক যে ছিল দেশ ।

সে দেশে সবাই ছিলেন জ্ঞানী । আর জ্ঞানী হলে যা হয়, কেউ কারো সাথে কথা বলতেন না । কথা না বলেও প্রকাশ করতে পারতেন মনের ভাব । সেখানে কথা ছিল নৈঃশব্দ্য দিয়ে ঢাকা, বলা ভাল নৈঃশব্দ্যও ছিল নৈঃশব্দ্য-এর দ্বারা আচ্ছাদিত । যেকোনও বাইরের লোক এলে অনায়াসে ধারণা করে নেবে, এদেশের সবাই বোবা ।

আসলে তারা কথা বলতেন না, বলার কিছু ছিল না বলে । তারা জেনেছিলেন,সব অনুভব করতে হয় । তারা একটা কবিতা পড়লে তা নিয়ে কখনও কথা বলতেন না । আলোচনা তো দূর অস্ত । কারণ, কবিতা তো পুরোপুরি অনুভবের ব্যাপার । এটা অরূপের সাধনা । আর অরূপকে রূপ দেবার চেষ্টা মানেই তাতে ত্রুটি থাকবে, আর সে কারণেই জনে জনে পার্থক্য থাকবে ।

স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে,তাহলে তারা বাজার করতেন কীভাবে ? কেননা বাজারের সঙ্গে নিশ্চিত জড়িয়ে রয়েছে কথার সম্পর্ক । কী কী রান্না করতে হবে এবং কী কী আনতে হবে তাদের স্ত্রীরা তা বলে না দিলে কীভাবে সম্ভব বাজার করা ? তা ছাড়া বাজারে গেলে, বিক্রেতা তাকে না বললে কেমন করেই বা দেবেন ক্রেতাদের ঈপ্সিত জিনিসপত্র ।

এই প্রশ্ন অবশ্যই হতে পারে । এবং তা স্বাভাবিক । আর তার উত্তর একটাই- দেশটা জ্ঞানীদের । এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই জানেন সকলের কাজ । জ্ঞানীরা তাই অনায়াসেই করতেন বাজার । কারণ,সবাই জানতেন প্রতিদিনকার কর্তব্য । তারা থলে হাতে বাজারে যেতেন। আর বিক্রেতারাও জানেন, কাকে কী দিতে হবে । এমনকি মূল্য দেবার সময়ও কোনো অসুবিধে হত না । ক্রেতা দাম দিলে বিক্রেতা তা নিয়ে নিতেন ।

জিনিস ক্রয় করে এসে তারা থলেটি রান্নাঘরে রেখে দিতেন । তারপর তাদের স্ত্রীরা তা রান্না করে ফেলতেন । ঠিক সময়মতো খাওয়াও হতো । কেননা, সকলেই জানতেন কখন কী করতে হবে ।

অর্থাৎ জ্ঞানীদের দেশে ছিল এক অনাবিল শান্তি । এক স্তব্ধতা বিরাজ করছিল সারা দেশে । অপ্রয়োজনীয় শব্দ সেখানে ছিলই না । আর শব্দের প্রয়োজনই ছিল না বলে দেশটা ছিল নৈঃশব্দ্য- প্রধান ।

দীর্ঘ দীর্ঘ বছর, হাজার হাজার বছর ধরেই এটা ছিল জ্ঞানীদের দেশ ।-আর স্বাভাবিকভাবেই নৈঃশব্দ্যের দেশ ।

এখানকার কথা জানত বাকি সকল দেশ । অর্থাৎ এর বাইরে যে পৃথিবী ছিল । এদের সম্পর্কে আগ্রহ ছিল সকলের । কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করার সাহস ছিল না কারও । তাদের দরজা জানালা খোলা থাকলেও কেউই সেখানে প্রবেশ করত না,কেননা সাহসই হত না,এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্যের দেয়ালের সামনে তারা থমকে যেত। সে দেয়ালকে ভেদ করার কোনো ক্ষমতাই ছিল না । তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্যে বাইরে থেকে কেউ এলে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেত না । প্রশ্ন হতে পারে, কীভাবে আলোচনা হত! কারণ স্তব্ধতার সাথে কীভাবে কথা বলা যায় ! কিন্তু যেত ।

ধরা যাক, কেউ প্রশ্ন করত, ‘ স্রষ্টা কী ? এর উত্তরে তারা নীরব থাকতেন । কেননা নীরবতাই এর একমাত্র উত্তর । সংসার জগৎ সম্পর্কে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরই তারা নীরবতা দিয়েই দিতে পারতেন । প্রকৃতপক্ষে তারা জানতেন নীরবতাকে ব্যবহার করতে । কবিতায় যেমন না বলা কথা থাকে,তেমনই ঘটনাটা । ওই না বলা কথা শোনার ক্ষমতা যাদের নেই, কবিতা তাদের জন্যে নয় ,তারা জ্ঞানীদের কাছে আসতও না কখনও ।

একবার এল ।

এল এ কারণে যে জ্ঞানীদের দেশটা তাদের দখল করার প্রয়োজন ছিল । দূর দেশের সেইসব মানুষেরা জ্ঞানীদের সম্পর্কে নানা কথা শুনেছিল, জেনেছিল তাদের নানা ভ্রমণ-বিলাসীর কাছ থেকে যে, জ্ঞানীরা বিশাল সম্পদের মালিক । সেই সম্পদ প্রকৃত অর্থে আর কেউই জানত না । তবে যারাই এখানে এসেছে, তারা এমনই মুগ্ধ হয়েছে, সে মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছে নানা শব্দের মধ্য দিয়ে । তার মধ্যে একটি শব্দ ‘সম্পদ’ । আর সেই ‘সম্পদ’ আসলে কী, কারোরই সঠিক জানা ছিল না।

তবে বছরের পর বছর এমন শুনতে শুনতে বাইরের দেশের রাজা আর ধৈর্য ধরতে পারল না ।-চলো, জ্ঞানীদের দেশটা দখল করে ফেলি ।

দরজাহীন জ্ঞানীদের দেশে তারা কেউ কেউ ঢুকল,-কিন্তু কিছুই পেল না । দেখল,নৈঃশব্দ্যের সাথে নৈঃশব্দ্য কথা বলে এখানে । দেখল, বাতাস এমনভাবে বইছে , যাতে গাছের পাতারও কষ্ট না হয়।

তারা গিয়ে জানাল সকল কথা ।

ধূর্ত মন্ত্রী বলল,- ‘ওদের কথা বলাও’ ।

একটু থেমে আবার বলল,- কথা বললেই ওদের ধ্বংসের পথ খুলবে । না হলে কেউই পারবে না নৈঃশব্দ্যের সাথে যুদ্ধ করতে ।

রাজা বললেন,-কেন? কেন? প্রতিরোধ না করলেই তো সুবিধা । খ্যাচ খ্যাচ করে কেটে ফেলা যাবে ।

মন্ত্রী হাসল । বুঝল,বংশধর বলেই এ রাজা। প্রকৃতপক্ষে গবেট । নইলে কোনো যোগ্যতাই নেই রাজদরবারে ঢোকার । একে বোঝানো যাবেনা, প্রতিরোধহীনতাও এক ধরনের প্রতিরোধ । একজন যুদ্ধবাজ লোকের সামনে কেউ যদি প্রতিরোধ না করে অনায়াসেই প্রাণ দেয় , তাহলে সেও থমকে যায় , একসময় ক্লান্তি অবসাদ কাজ করে তার ভেতর, সেই যুদ্ধবাজও অস্ত্র ফেলে দেয় এক সময় । আর জ্ঞানীরা এটাই করবেন ।

মšী¿ বলল ,-‘ নৈঃশব্দ্যের শক্তি বিচূর্ণ হতে পারে একমাত্র শব্দ দিয়েই । ’

আর দেশের মধ্য থেকে বাছা হল কিছু মানুষকে,যাদের বিশেষ শিক্ষা দেয়া হল, তাদের বোঝানো হল সমগ্র ব্যাপারটা ভাল করে, জ্ঞানীদের দেশে গিয়ে তাদের কী কী করতে হবে, তারা জাহাজে চেপে রওনা দিল জ্ঞানীদের দেশের দিকে । আর তাদের কেউ কেউ জ্ঞানীদের দেশে ঢুকে কিছুদিন এদিক-ওদিক ঘুরল,অনর্গল কথা বলল । শ্রোতা পেল কিন্তু কোনো উত্তর পেল না । স্বাভাবিকভাবেই তারা একসময় চুপ করে গেল । নদীর তীরে তীরে ঘুরল বেশ কিছুদিন । পাখির ডাক শুনল,জলের বয়ে যাওয়া দেখল । তারপর একটা চিঠি লিখল দেশে ।

‘ পরমমান্য মন্ত্রী মহাশয়,আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ । কেননা,আপনি আমাদের পথ- প্রদর্শক । প্রকৃত পিতার কর্তব্য করেছেন । আমরা জানতে পারছি নৈঃশব্দ্যের মহিমা । জ্ঞানের চূড়ান্ত প্রকাশই হচ্ছে নৈঃশব্দ্যকে অনুভব করা। এ সুযোগ দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ ।’

মন্ত্রী মাথায় হাত দিল । কেলেঙ্কারি কাণ্ড । এভাবে যদি সকলেই জ্ঞানীদের খপ্পরে পড়ে,তাহলে বিপদ। অতএব কিছুদিন অভিযান বন্ধ রইল । তারপর আবার পাঠানো হল কিছু লোককে । এবার সামান্য কজন বাদে প্রায় সকলেই তাদের কাজ আরম্ভ করল ।

তারা বোঝাবার চেষ্টা করল কথা বলার মধ্যে এবং কাউকে ডাকার মধ্যে রয়েছে এক অকৃত্রিম আনন্দ ।

- ধরুন আপনাকে আপনার পুত্র ডাকল ‘বাবা’ বলে । এই শব্দের দ্বারা আপনারা যুক্ত হলেন ।

-ধরুন আপনি পুত্রকে ডাকলেন ‘খোকা’ বলে,এই ডাকও ওই একইরকমভাবে যুক্ত করল আপনাদের ।

-আসলে এই যে পরস্পরকে ডাকা ,এর মধ্য দিয়েই যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন ।

- একটি গাছকে নাম দিন,তাকে ডাকুন ওই নামে,সবাই চিনবে।

-আপনি কী করে জানবেন কে কার ? কে কী ? যতক্ষণ না তাকে আপনি কিছু বলে সম্বোধন করছেন ?

আর সম্বোধনের জন্যে চাই শব্দ । অর্থবহ শব্দ । আর একটি অর্থবহ শব্দের পরিবর্তে একটি অর্থবহ শব্দ উচ্চারিত হলে, তা যে আনন্দ সৃষ্টি করে তা কক্ষনো অনুভব করেছেন ?

জ্ঞানীরা শুনলেন এবং মৃদু হাসলেন ।

বহিরাগতরা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করল, জ্ঞানীরা কিছুতেই বিস্মিত হন না । অতএব তারা ঠিক করল বিস্ময়ের ভাব যদি ওদের মধ্যে আনা যায়, এমন কি সৃষ্টি করা যায় কৌতূহলের প্রবণতা, তাহলে কাজ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ।

কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব ?

কাজটা যে কঠিন তারা তখনই বুঝল, যখন দেখল একমাত্র সন্তান মরে যাবার পরও মৃতের মা- বাবাকে কাঁদতে দেখল না । তারা নিজেরাই অবাক হয়ে গেল ঘটনাটার জন্যে । অনেক আলোচনার পর বহিরাগতরা বুঝল যে , জীবনের অনিত্যতা সম্পর্কে জ্ঞানীরা এত নিশ্চিত যে , ক্রন্দন ব্যাপারটাই অপ্রয়োজনীয় বুঝে গেছেন । গাছের মত এক নিঃস্পৃহতা তারা আয়ত্ত করেছেন । এরা জেনে গেছেন মৃত্যু হচ্ছে সাময়িক ছেদ । অতএব এর জন্যে শোকাকুল হওয়ার কোনো যুক্তি নেই ।

বহিরাগতরা ঠিক করে , জ্ঞানীরা যেখানে বসেন, তারা সেখানে গিয়ে দাঁড়াবে । তারপর সজোরে হাসতে থাকবে । কারণ, অকারণ কিছু করলে, কারণ জানার আগ্রহ তাদের হবে । আর এই আগ্রহটাই প্রয়োজন।

আর এটা তারা করে । আর হাসতে হাসতে লক্ষ্য করে কারো মুখের ওপর কোনো কৌতূহলের চিহ্ন দেখা যায় কি না !

আর একদিন পেয়েও গেল একজনকে ।

তারা তার পিছন পিছন চলল । তার বাড়িতে প্রবেশ করল । বলল, ‘আপনি জানতে চান, আমরা হাসছি কেন?’

জ্ঞানী কোনো কথা বললেন না । শুধু তাকিয়ে রইলেন ।

তারা বলল, ‘আপনি জ্ঞানী , আপনারা আর আমরা এক নই । আপনার বাড়িতে এসেছি । অতিথি । ’

জ্ঞানী সম্মানের সঙ্গে মাথা নোয়ালেন । ‘প্রশ্নটা এই । আপনারা কথা না বলেও বোঝাতে পারেন । কিন্তু আমরা তা পারি না । এই যে আমরা হাসছি, এটা আপনার ভাল লাগছে না । না খারাপ লাগছে, সেটা আমরা বুঝছি না । যদি বলেন খারাপ, তা হলে চুপ করে যাব ।’

জ্ঞানী তাদের সম্মতি দিলেন হাসার ।

তারা বুঝল জ্ঞানীর জগৎ কম্পমান ।

তারা উৎসাহে বলল, ‘আপনাদের প্রাচীন মহাগ্রন্থ আমরা পড়েছি । তাতে দেখেছি হাসি নিয়ে কোনো শব্দ নেই । অথচ দেখুন, হাসি একমাত্র মানুষ ছাড়া কাউকেই মানায় না । এখানেই, এই হাসিতেই , অন্য জীবের সঙ্গে মানুষের পার্থক্য ।’

জ্ঞানী মাথা নাড়লেন ।

- নদীর ঢেউ উঠুক আপনি চান না ?

- একটু ঝড় হোক, গাছেরা দাপাদাপি করুক ...

- নদীর প্রবহমান জলে যে ছন্দ, যে সঙ্গীত তা শুনতে ইচ্ছে হয় না ।

- ‘বাইরে থেকে কেউ এলে তারা যাতে বোঝে এমন ভাষায় একবার হেসে বলুন- মহাশয়ের আগমন হোক ।’

তারা এসব বলে তাকিয়ে রইল জ্ঞানীর দিকে । জ্ঞানীর পেছনে দাঁড়িয়ে তার বাড়ির লোকজন। জ্ঞানী উঠে দাঁড়ালেন । তারপর পায়চারি করলেন দীর্ঘক্ষণ । আর একসময় বলে উঠলেন, ‘আগমন হোক ।’

আর এই প্রথম উচ্চারণ সমগ্র ঘরটাকে কাঁপিয়ে দিল । গোটা বাড়িটা একটু পরেই কথায় ভরে গেল। আস্তে আস্তে কথা ছড়িয়ে যেতে লাগল । কেননা, জ্ঞানীদের ভেতর কথা বলার এক মোহ ছড়িয়ে পড়ল । তারা ‘বাবা’ ডাক শুনলেন । ‘খোকা’ বলে ডাকলেন । আর এই ডাক তাদের কানে অন্য অর্থ দিল । তারা দীর্ঘ দীর্ঘ বৎসরের কথাহীনতার পর কথা বলতে শুরু করে আর থামতে পারলেন না । এক আনন্দ, শিশুর প্রথম চলার আনন্দের মত, তারা অনুভব করলেন । আর বলতে লাগলেন কথা । শুধু কথা আর কথা । অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয় কথা । আর ফলে নৈঃশব্দ্য ভেঙ্গে যেতে লাগল ।

জ্ঞানীরা বাজারে গিয়ে এটা ওটা কিনতে লাগলেন । জিনিস দর করলেন । মূল্য গুনে দিলেন । বিক্রেতাও গুনে নিল। বাজারে যাবার আগে জ্ঞানীদের স্ত্রীরা বলে দিলেন বাজার থেকে কী কী আনতে হবে ।

যে নৈঃশব্দ্য দিয়ে সবকিছু সমাধান হচ্ছিল সুষ্ঠুভাবে,এবার আর তা হল না । এবার কথা সে জায়গা নিল । গল্পের ছলে একজন আর একজনের কথা বললেন । তার থেকে জন্ম হল নিন্দার ।

এদেশে কোনো কাক ছিল না । কোথা থেকে একটা কাক উড়ে এসে বসল গাছের ডালে , তারপর বাড়ির উপর । আর তারপর তারস্বরে সে ডাকল, কা ...কা । আর অনেক কাক জুটে গেল সেখানে । চারদিকে এক শোরগোল শুরু হয়ে গেল । ক্রমশ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা জন্ম হল । কেননা নিন্দার জন্ম হল ।

ফলে বর্তমান বহিরাগতরা আর বহিরাগত হিসেবে রইল না । তারা ক্রমশ বাইরে চিঠি পাঠাতে লাগল । আর নিয়ে আসতে লাগল লোকজন । জাহাজে করে ছদ্মবেশে ঢুকতে লাগল যোদ্ধারা । আর একদিন জ্ঞানীদের সমগ্র দেশটাই তারা দখল করে নিল । তৈরি করল বিদ্যালয় , মহাবিদ্যালয় । তারা নানা পুস্তকের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে দিল, ‘বর্তমানের জ্ঞানীরা আসলে বহিরাগত । যেমন তারা । ’

একথা তারা বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দিল । আর তা শিশুরা মুখস্থ করতে লাগল ।

তারা বিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে কথা বলল । যন্ত্রচালিত শকটযানে চলাফেরা করতে লাগল । রাতারাতি পুরোনো অনেক ভাস্কর্য ধ্বংস করে সেখানে তাদের ধরনে বেশ কিছু মূর্তি স্থাপন করল ।

আর আস্তে আস্তে তৈরি হয়ে গেল একটি নতুন সমাজ ।

বহু বছর পরও অনেকে বলতে লাগল,‘সেদিনকার ওই বহিরাগতরা যদি কথা বলা না শেখাত তাহলে কোথায় পড়ে থাকতাম আমরা ।’

আসলে ঘটনাটা এরকমই । জ্ঞানীদের এখন আর কোনো বংশধর নেই , তারা ঠিক কোথায় গেছেন কেউই জানে না । একসময় এরকম সন্দেহও দানা বাধে জ্ঞানীরা কি সত্যিই কিছু ছিলেন । যার ফলে, জ্ঞানীদের দেশটা ধ্বংস হয়ে যায় । আর তা হয়ে যায় বহিরাগতদের উপনিবেশ ।

শুধু মন্ত্রী একবার বলেছিল,-আমি সম্ভবত ঠিক করিনি,” কিন্তু বাকিরা মন্ত্রীর জীবনীতে লিখেছে ,-‘ মন্ত্রী মহাশয় ছিলেন প্রকৃতই ঈশ্বরের অংশ । অন্ধকার ও নৈঃশব্দ্য থেকে তিনি সকলকে বাইরে এনেছেন।”

শুধু একজন দার্শনিক, তিনি একটু ঠোঁট-কাটা,স্বদেশেও তার কোন বন্ধু নেই,তিনি বললেন,-‘জগতে এভাবে কোন দেশ বিনাযুদ্ধে জয় করার মন্ত্রী মশায় যে কৌশল দেখিয়েছেন ,তা প্রকৃতই ভাবার মতো।”

জনান্তিকে বলা যায়,এটা আমার কথা নয়, সদ্যপ্রকাশিত একটি রচনায় এক ব্রিটিশ লেখক লিখেছেন যে, উপনিবেশ স্থাপনের কৌশল হিসেবে এটা তুলনাহীন।

তার রচনার শেষে যে বাক্যটি তিনি লিখেছেন, তা আমরা উদ্ধার করতে পারি। তা এই...

“বাংলাদেশের ইতিহাসও সম্ভবত এটাই ।”

magnifiercrossmenu