ভুতুড়ে কান্ড

সূর্য ডোবার খানিকক্ষণ আগেই মাকে বলছিলাম, আজ শরীর ভালো নেই, স্যারের বাসায় পড়তে যাব না। তখন মা আমার অবস্থা দেখে বলল, সন্ধ্যায় নাস্তা করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

সন্ধ্যে নেমেছে। আচমকা আবার ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়াতে বিদ্যুৎ চলে গেল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিদ্যুৎ আর ঝড়-বৃষ্টির কারণে মা বললেন, আজ থাক বাবা, কাল সকালে তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো। টেবিলের উপর থেকে চার্জারটা জ্বালিয়ে মা চলে গেলো।

দরজাটা আলতো করে খোলা ছিল। ধিরে ধিরে চোখও লেগে এসছে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চমকিয়ে উঠলাম। ভাবলাম, বাতাসে হয়তো এমনটা হচ্ছে। আবার চোখ বুজলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি আবার একই শব্দ। কেমন যেন একটু ভয় ভয় লাগছে। তাই বিছানা থেকেই মাকে ডাক দিলাম। মায়ের কোনো সাড়া নেই। মনের মধ্যে ভয় আরও পাকাপক্ত করে আসন করতে লাগল। হৃদপিণ্ডটা ধক্ ধক্ করতে লাগল। আর ওইদিকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দটাও বেড়ে চলেছে। মনের মধ্যে ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে গেলাম দরজার কাছে। যেই দরজা খুলব তখন গেল শব্দ বন্ধ হয়ে। ভয়ে ঢোক গিলে কিছু ক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম। এরপর আবার বিছানায় চলে আসলাম।

আবারও শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন ঘুমে চোখ লেগে এসছে। ঠিক তখনই আবার সেই দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। ভয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,’মা,তুমি?’ কোনো সাড়া পেলাম না। দরজায় যেতে আরও ভয় লাগছে কিন্তু দরজার ঠক ঠক শব্দ থাকছে না। ভয়ে গা ঘেমে যাচ্ছেতাই অবস্থা। চোখ-মুখ টিপে ধরে দরজা খুললাম। দেখি সামনে স্যার দাঁড়িয়ে। স্যারকে দেখে কিছুটা সস্তি ফিরে পেলাম, ভয় চলে গেলো। আবার খুব অবাকও হলাম, এ ঝড়-বৃষ্টির রাতে বাসায় চলে আসলো! স্যার আমাকে দেখেই বললেন, কি? অবাক হলে? আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললাম, না, স্যার। অবাক কেনো হবো?। স্যার তখন হেসেই বললেন, তুমি আমার রেগুলার স্টুডেন্ট। যত ঝড়-বৃষ্টি আর অসুখ হউক না কেন তুমি পড়তে আসোই। তাই আজ আসোনি বলে আমি নিজেই চলে আসলাম। কি? খুশি হও নি?

তারপর স্যারকে রুমে নিয়ে আসলাম। মা শুয়ে ছিল বলে আর মাকে ডাকি নি। তবে স্যারকে কেনো জানি আজ খুব অদ্ভূত লাগছে! এমনিতে স্যার একটু চাপা স্বভাবের। আমাদের বাসায় এই ঝড়-বৃষ্টিতে তো আসার কথা না। এরপর স্যারের সাথে অনেক গল্প করলাম। বৃষ্টি থামার পরই স্যার চলে গেলেন। তখন মনে মনে আমার একটা প্রশ্ন জাগছিল, এত ঝড়-বৃষ্টির মাঝেও স্যার কিভাবে ভিজলেন না?

কিছুক্ষণ পর মা উঠে এলেন।আমাকে বললেন, কিরে একা একা কার সাথে বকবক করছিস? আমি বললাম, কি যে বলো মা! একা একা কেন বকবক করবো? স্যার, এসেছিল। আজ পড়তে কেন গেলাম না?  তা জানার জন্য। তখন মা আমার কথা শুনে হেসে বললেন, ধুর! বোকা। স্যার এ ঝড়-বৃষ্টিতে কেন আসবে? মাকে এত করে বলেও বুঝাতে পারছি না স্যার এসেছিল। মা এবার রেগেই বললেন, অসুস্থ শরীরে উল্টাপাল্টা বকছিস! খেয়ে শুয়ে পড়। কালই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোকে।

মাকে বললাম, তুমি স্যারকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নাও আমাদের বাসায় এসেছিল কি না? আমি অনেক বলার পর মা স্যারকে জিজ্ঞেস করেছেন। স্যার ওপাশ থেকে মাকে বললেন, উনি আজ আমাদের বাসায় আসেন নি! তখন ফোন রেখেই মা আমাকে বলছে, তোর মাথা সত্যিই গেল রে!’

আমি তো মায়ের কথা শুনে রীতিমত বিশ্বাস করতে লাগলাম, আমার মাথা মনে হয় সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেল! এরপর ঘুমাতে এসে ভাবছিলাম,কিছুক্ষণ আগে যা ঘটে গেল তা ভূতুড়ে কান্ড নয়তো? তখনই বুঝে গেলাম এত ঝড়-বৃষ্টিতেও কেন স্যার ভিজলো না! ধরে নিলাম,নিশ্চিত এটা ভূতুড়ে কান্ড। আমি তো এটা নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম। আরও গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম, আমি যে ভূতে ভয় পাই তা আবার ভূতেরা জেনে ফেলেনি তো? এই ভেবে রাম রাম বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

-চৈতি দাস অদিতি

চলতি সংখ্যা