একটি শিরোনামহীন প্রেমের গল্প

একটা দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে গেল আজ। একটা সাপ আমার পিছু নিয়েছে। আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে অনবরত। আমি যেখানেই যাচ্ছি পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। আমি দৌড়ালে সাপও দৌড়াচ্ছে। বার বার ছোবল দিতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে। ছোবল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি দুরে সরে যাচ্ছি। সাপটি উড়তে শুরু করল মুহুর্তেই। উড়ে উড়ে আমার কপালে ছোবল দিতে চাইছে। আমি প্রানপনে দৌড়াচ্ছি। আর পারছি না। আমার শরীর কাঁপছে। আমার গলা শুকিয়ে গেছে। আমি পানি পানি করে চিৎকার করছি। তৃষ্ণায় খাক কোথাও পানি নেই। আমার কম্পন আরও বেড়েই চলেছে। সাপটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমি চিৎকার করছি। তীব্র চিৎকারে আকাশ বাতাশ কাঁপিয়ে তুলেছি। আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। আমি তখনও চিৎকার করছি। এরকম স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি! সত্যি সত্যিই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। বিছানা ছেড়ে উঠে বসি আমি। এক গ্লাস পানি খেতে খেতে চারিদিকটা ভালভাবে তাকিয়ে দেখি। সাপটি খুঁজতে থাকি। কোথাও কিছু পাইনা। আমার বুকের মধ্যে কেঁপে কেঁপে ওঠে। আমার মনে হচ্ছে সাপটি এ রুমের মধ্যেই আছে। আমার গা ছমছমে ভাব কমেনা কিছুতেই। ঠিক এরকম সময়েই তোমার কথা মনে পড়ে। তোমার হাসি। তোমার কথা বলা। তোমার চাহনি আমার হৃদয়পটে ভেসে উঠতেই আমি অন্যমনস্ক হয়ে যায়। ইদানিং যে কোন স্বপ্নের পরেই তোমার কথা মনে পড়ে।

রাতের নীল আকাশে যখন একফালি চাঁদ উকি দেয়, যখন আকাশ ফুড়ে স্নিগ্ধময় জোৎস্নায় ভরে যায় চারপাশ তখন আমার হৃদয়ের মাঝে ঝড় ওঠে। বুকের ভেতরে অজানা অস্থিরতা কাজ করে। আমার শরীরটা কেমন কেঁপে কেঁপে ওঠে। আমি জানালার গ্রীল ধরে আকাশপানে তাকিয়ে থাকি। তীব্র অস্থিরতা আমার মন থেকে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার লাইন ভেসে ওঠে হৃদয়পটে। চারলাইন আবৃত্তি করি,

The woods are lovely dark and deep
But I have promise to keep
And miles to go before I sleep
And miles to go before I sleep.

আকাশের বুকে তখনও অগনিত তারার মেলা। ঝিঁকিমিকি আলো আধারের খেলা। দুয়েকটা জ্বোনাকির উড়ে চলা। আমার মনটা তখনও অস্থির। আমি তোমার কথা মনে করতে চাইছি না তবুও মনে পড়ছে। অস্থিরতা কমাতে সিগারেট ধরালাম। ব্যাপারটি লক্ষ করেছি ধোয়া ছাড়ার সময়েই। আকাশ পানে তাকিয়ে ধোয়া ছাড়তে খারাপ লাগছিল না খুব। ছেড়েছি বার কয়েক। ধোয়া ছাড়ছি আর খুক খুক করে কাশছি। পুড়ে যাচ্ছে হাতের সিগারেট। দ্রুত ছোট হয়ে আসছে সিগারেটের আয়ু। সেই সাথে ছোট হয়ে আসছে আমার চিন্তার আয়ু। হাতের সিগারেট আমাকে আকড়ে ধরেছে। আমি সিগারেটের প্যাকেটটা আকড়ে ধরেছি। প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ধুমপান ক্যান্সারের কারণ। আগে লেখা থাকতো ধুমপানে স্ট্রোক হয়। সকল ধুমপায়ীরা জানে এর কুফল। তবুও ধুমপান চলে ননস্টপ হারে। কারণ নেশা। একবার নেশা হয়ে গেলে ছাড়া কঠিন। তবে এর থেকেও আর জটিল নেশা জগতে আছে।  জটিল নেশা।

জগতের সবচেয়ে মোহময় নেশা হল ভালবাসার নেশা। প্রেমের নেশা। আমিও সেই নেশাই আসক্ত। আমি জানি তোমাকে ভালবাসা আমার যতখানি সম্ভব তার চেয়েও বেশি তোমাকে হারানোর ভয়। তোমাকে নিয়ে মনের মধ্যে যত উঁচু পাহাড়ই গড়ি না কেন তেমার এক ফোঁটা চোখের জলেই তা নিমিষে ধ্বসে যেতে পারে। তোমাকে ভালবাসা আমার কাছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থেকে সুন্দর স্বপ্ন দেখার মতন।

সেদিন রাস্তার মোড়ে অনেক্ষন পুস্পর অপেক্ষা করছিলাম। পুস্প সেই মেয়েটি যাকে দেখে আমার হৃদয়ে ভালবাসা নামক একটা ফুল গাছের জন্ম হয়েছে। এই চারা গাছটিকে আমি রোজ যত্ন করি। পানি দিই। হৃদয়ের জমিনে বেড়ে উঠার তপস্যা করি। ধ্যান করি। পুঁজা করি। এখনই হয়তো সে কলেজ থেকে ফিরবে। কারও জন্য কোথাও দাড়িয়ে থাকা আমার অভ্যাসের বিপরীত। তবুও দাড়িয়ে রইলাম। আমার খুব ইচ্ছে করছিল আজ একটু পুস্পকে দেখি। পুস্প প্রস্ফুটিত পুস্পের মতই সুন্দর। তার  সুবাসে মোহিত হতে হয় নিমিষেই। সে পবিত্র। সে স্নিগ্ধ। সে পরীর মতন। সে স্বপ্নের মতন।  অনেক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর খেয়াল হল আজ সরকারি ছুটি। কলেজ বন্ধ। এতক্ষন তার অপেক্ষা করে কি বোকামিই টা না করেছি! পুস্পের কথা ভাবতে ভাবতে সময় অপচয় করতেও ভাল লাগে। বোকামীগুলোও মধুর হয়ে যায়।

মনে মনে কত ভেবেছি পুস্পর হাত ধরে বলব, পুস্প আমি তোমার ভরা রোদ্দুরের ছায়া হতে চাই। তোমার জীবনের সৌরভ হতে চাই। হতে চাই নীলকণ্ঠ পাখি। এক আকাশে উড়ে বেড়াতে চাই ডানা মেলে। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মেঘ ছুতে চাই দুজনে মিলে। তুমি বৃষ্টি চাইলে আমি আকাশের গা থেকে একমুঠো মেঘ পেড়ে দেব তোমায়। তা থেকে বৃষ্টি নামবে একদিন। তুমি নাচবে বৃষ্টির তালে তাল মিলিয়ে। আমি তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবো। তোমার চোখে জল জমলে আমার কপালের ঘাম জড়ানো রুমাল দিয়েই তোমার চোখের জল মুছিয়ে দেব। বিকেল হলে পশ্চিম বারান্দার এক কোনে দাড়িয়ে লাল সুর্যেকে বিদায় জানাবো দুজনে মিলে। তুমি হাত নাড়বে লাল সুর্যকে। আমি তোমার হাতের সাথে তাল মিলাবো। তোমার কপালে একটা লাল টিপ পরিয়ে দিয়ে বলব সুর্যটা তোমার কপালে লাগিয়ে দিলাম, আমার হৃদয় রাজ্য আলোকিত কর হে প্রেয়সী। আমাকে ধন্য কর। চলো সোনালী দিনে স্বপ্নের মত সুন্দর সংসার গড়ি আমরা! আমার মুখে লেগে থাকা একচিলতে হাসির কারণ কি হবে তুমি?  কতবার ভেবেছি তোমার চোখে চোখ রেখে ছুড়ে দেব মনের সমস্ত কথা। তোমাকে জড়িয়ে ধরে জীবনানন্দ দাশের মত করে বলব, চল বুনো হাঁস হই দুজনে। কিন্তু সাহসে কুলোইনি কোনদিন। জড়িয়ে ধরা তো দুরের কথা আমি আজও বলতে পারিনি, পুস্প চলো বুনো হাঁস হয় দুজনে। স্বচ্ছ সুন্দর পুকুর জলে ভেসে বেড়ায় মনের সুখে! কখনও বলতে পারিনি আমি, আমি কি তোমার তুমি হতে পারি?

গতরাত চোখের দুটি পাতা এক করতে পারিনি কিছুতেই। বুকের ভেতর কেমন জানি হাহাকার। ব্যাথা অনুভব করছি। মনে পড়ছে সেই প্রথম দিনটির কথা। সেদিন আমি পুস্পকে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন আকাশে ছিলো কালো মেঘ। প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী। নীল শাড়িতে তুমি এলে। আকাশের সব নীল ঝরে ঝরে পড়েছে তোমার শাড়িতে। কপালে কালো টিপ। মেঘ থেকে নিয়ে যেন জড়ো করে কপালে পরেছো। মাথার উপর গোলাপ ফুলের নকশা আঁকা ছাতা। বাতাশ ডানা ঝাপটাতে শুরু করলে তোমার ছাতাটা গেল উল্টে। তোমার শরীরের অর্ধেকটা ভিজে যাচ্ছে। আমার শান্ত হৃদয় অশান্ত হল। আমি তোমার চেখের দিকে তাকালাম। বর্ষায় ফুলে ওঠা নদীর মতই আমার হৃদয়েও মায়ার জন্ম হল। মায়াবিনী আমাকে মুগ্ধ করে চলেছে। আহ কি অপুর্ব চোখ। কাজলের রেখা থাকায় আরও সুন্দর লাগছিল চোখদুটিকে। স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছিল। আমার বুকের ভেতর তখন কাল বৈশাখি ঝড়। আমার বুকের ভেতর তখন সমুদ্রের জোয়ার। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে হৃদয়ে তীরে। ভাল লাগছে ভীষন। বার বার  ছাতাটা উল্টে যাচ্ছে। মেয়েটি হাত ঝাকিয়ে ছাতা ঠিক করে চলেছে। আমার ঠোঁটের কোনে তখন ফুঁটে উঠেছে হাসি। আমি হাসছি। আমার হৃদয়ের ব্যালকুনিতে তখন উঁকি দিয়েছে ভালবাসা।

মেয়েটির মাথায় একটা কদম ফুল গোঁজা থাকলে মন্দ হত না। ভাবছি আর আপন মনে মেয়েটির সৌন্দর্য্য কল্পনা করছি। কি এক ভাল লাগা থেকে হেসেই চলেছি। হঠাতই মেয়েটির চোখে আগুন। বিস্ফারিত নেত্রে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ভারি অসভ্য তো আপনি! মেয়েটির কথায় সম্বিত ফিরে এলো। লক্ষ্য করলাম মেয়েটি প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে। ভেজা অংশটুকু গাঢ় নীল আাকার ধারণ করেছে। আরও চমৎকার লাগছে তাকে। আমাকে বলে উঠল, কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ! এমন হ্যাংলার মত হাসার কি আছে বলুন তো! মেয়েটির কোন কথায় আমার কানে ঢুকছে না। খারাপও লাগছে না। আমার মুখে তখনও হাসির রেশ। মেয়েটি মহাবিরক্ত। আমি হেসেই চলেছি। ছাতা মাথায় মেয়েটি হন হন করে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। টুনটুনীর মত তখনও মনটা আনন্দে নেচে নেচে বেড়াচ্ছিল। প্রচুর ভালবেসে ফেলেছিলাম সেদিন থেকেই।

যেদিন ভালবাসার সুর্যদয় হল আমার মনের আাকাশে সেদিন থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম এই আলোতেই যেন সারাজীবন আলোকিত হতে পারি। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম সুর্যও অস্ত যায় একটি নির্দ্দিষ্ট সময় শেষে। মনে মনে রোজ চাইতাম পুস্পের সাথে আমার বন্ধুত্বটা হয়ে যাক অন্তত। পুস্প তার ভাললাগা মন্দ লাগাগুলো আমার সাথে ভাগাভাগি করুক। আমার সাথে কথা বলতে শুরু করুক।

দিন যত গড়াতে লাগল আমার স্বপ্নগুলো যেন আরও বিস্তৃতিলাভ করল। রোজ সংসার গড়ার স্বপ্নে বিভোর হতে শুরু করলাম। একটা মধুর সংসার হবে আমাদের। সংসারে আমি আর পুস্প। রাগ অভিমান ভালবাসা সবকিছু নিয়েই আমরা গড়ব একটা সংসার। সেই সংসারের নিখুত কারিগর হবে পুস্প। আমি ভুল করব বারবার। ও কারনে অকারনে আমাকে চোখ রাঙ্গাবে। আমি হাসব। অবাক হব। ও বাজার থেকে আমাকে ভিম আনতে বললে আমি ডিম আনব ভুল করে। সে কাঁচা ডিম ভেঙ্গেই বাসন কোসন মাজতে শুরু করবে। থালাবাটি দিয়ে বেরুবে ডিমের দুর্গন্ধ। আমি জিজ্ঞেস করব কিসের গন্ধ? ও হেসে বলবে তোমার আনা ভিমের গন্ধ। আমি অবাক হব। রাগ করব। বলব ভিম আনতে বললে কখোন তুমি ডিম আনতেই বলেছো! এই নিয়ে শুরু হবে তর্ক। রোজ রোজ সংসারের স্বপ্ন আমাকে অনেক বেশি দুর্বল করে তুলল ওর প্রতি। ওকে নানান প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। একবার জানতে ইচ্ছে হয়েছিল, বাজার থেকে পঁচা মাছ আনলে পুস্প কি সেটি কুটতে বসে যাবে নাকি ছুড়ে ফেলবে মেঝেতে? নাকি চোখ রাঙ্গিয়ে ঝগড়া করবে আমার সাথে আর রান্না করবে!  জানা হয়নি। জানতে পারিনি তবে খুব সখ ছিল দেখার।

হয়তো পুস্পকে এই জীবনে পাওয়া যাবে না কিছুতেই। তবুও ওকে প্রচন্ড ভালবাসি। আমি জানি এসমস্ত কথা লেখার কোন প্রয়োজন নেই। কেউ হয়তো পড়বেও না। তবুও লিখছি। কারণ আমার দিন ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে। আমার পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। আমার শরীরের যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে ক্রমাগত।  মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচব না। হয়তো অনার্সটাও কমপ্লিট হবে না। তার আগেও হয়তো চলে যেতে হবে জীবনের সমস্ত হিসাব বাকি রেখে। হয়তো পুস্প নামের মেয়েটি কখনো জানতেও পারবে না এক অভাগা তাকে গোপনে অনেক ভালবাসতো। তাকে নিয়ে রচনা করত হাজারো প্রেমের কাব্য। রাত জাগানিয়া পাখিদের মত থাকতো রাতের পর রাত নির্ঘুম। শুধু তার কথা ভাবতো। তাকে নিয়ে হাজার রকম স্বপ্ন দেখত।

আজ আমার চোখের এক ফোঁটা জলকে সাক্ষি রেখে বলতে চাই পুস্প যে পৃথিবীর বুকে প্রস্ফুটিত তুমি স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছিলে সেই স্নিগ্ধতা গায়ে মাখতে পারলাম না। তবু ভালবাসি তোমাকে। ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি বাসা বেধেছে আমার রক্তে। সেই ক্যানসার ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছি হাসপাতালের বিছানায়। চোখে ক্রমাগত অন্ধকার দেখছি। শরীরের ভেতরের ঘা গুলো শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে । বেঁচে থাকার মনোবল হারাচ্ছি ক্রমাগত। আমার শেষ ইচ্ছে ছিল তোমার মুখখানি দেখেই চোখদুটো চিরকালের মত বুঁজব। আমার চারপাশে শুধু অন্ধকার। যন্ত্রণা আমাকে শুকিয়ে দিয়েছে। আমার ওজনও অবিশ্বাস্য ভাবে কমে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। রোজ সকালে যে ছেলেটি তোমার কলেজ যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকত খুব গোপনে তার আর দাড়িয়ে থাকার শক্তি নেই। আমি আর দাড়াতে পারিনা। আমার পৃথিবী এখন শুন্য। এই শুন্য পৃথিবীতে তুমি আমার কষ্টের সাথী হবে এটা আমি চাই না, তাই তোমাকে কিছু না বলেই নিরবে সরে গেলাম দুরে। অনেক দুরে! সংসারী হও! সুখি হও জীবনে!

শুধু এতটুকু পড়েই কুড়িয়ে পাওয়া ডায়েরির পাতাটা বন্ধ করে থো মেরে বসে রইলাম কিছুক্ষন। আমি স্তব্ধ। আমি যেন নিরব ও নির্বেকার। ফেঁটে যাওয়া বেলুনের মত চুপসে আছি। কোন কাজেই মন বসল না কিছুতেই।

কিছুক্ষণ থো মেরে বসে থেকে আবারও ডায়েরির পাতা খুললাম। দেখতে চাইলাম ছেলেটির কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা। নতুন করে আবার পাতা উল্টিয়ে দেখলাম সমস্ত তারিখগুলো কালো কলমে ঘষে ঘষে কেটে রেখে দেওয়া। নামটিও বোঝা যাচ্ছে না কিছুতেই। আমি ক্রমাগত পাতা উল্টাচ্ছি। ছেলেটির ঠিকানা খোঁজার নেশা আমাকে পেয়ে বসেছে। আমার বুকের মধ্যে হাহাকার। অজানা ব্যথায় মুষড়ে আছি। মেয়েটি কি কখনোই জানতে পারবে না ছেলেটিকে? ছেলেরটির শেষ সময়ে পুস্পকে আমি তার পাশে দেখতে চাই! ছেলেটির নাম ধাম জানিনা। লেখা নেই। জানিনা ছেলেটি কোন হাসপাতালে ভর্তি! ছেলেটি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে আমাকে জানতেই হবে! লক্ষ করলাম, আমি চোখের কোনে একবিন্দু জল জমেছে। আমার বুকে তখন আশ্বিনের মেঘ। ছেলেটিকে আমার পেতেই হবে। পুস্পকেও খুঁজে বের করে ছেলেটির শেষ ইচ্ছে পুরণ করতে হবে। পুস্পকে সামনে পেয়ে ছেলেটির অভিব্যক্তি দেখার আগ্রহে বিভোর হয়ে আছি। আমি ক্রমাগত ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে দেখতে থাকি। আমার চোখদুটো কেন জানি ঝাপসা হয়ে আসে!

© মাহির তাজওয়ার

চলতি সংখ্যা