শাহরিয়ার জাহাঙ্গীরের কবিতাগুচ্ছ : শোকলিপি

এক

মৃত্যুর কাছাকাছি হলাম একে অপরকে আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে।
বহুদিন আগে এই আমি আকাশ হতে চেয়েছিলাম;
এখন মৃত্যু দিয়ে বিদায় নিতে চাচ্ছি।
অথচ এই আমি বহু ক্ষোভ জমা রেখেছি,
এখন আমি পুড়ছি তাপে-অনুতাপে;
আমি ক্ষয়ে যাচ্ছি; বিদ্ধস্ত হচ্ছি পারমানবিক শৃঙ্খলে।
ভেঙ্গে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি…
এখন আমি চলে যাচ্ছি-
বাঁধা দাও…
মরে যাচ্ছি-
ধরে রাখো; আলিঙ্গন করো ঠিক প্রথম দিনের মতো।
অভিমান নয়, বাঁচিয়ে রাখো প্রেমে অপ্রেমে।
উত্তাপ ছড়াও, হাত বাড়াও
কথা দাও আমরা একটাই আকাশ হবো; একটাই পৃথিবী বটে।
তুমি হাসছো; তোমার চোখ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে তেজসষ্ক্রিয়
বিদ্ধস্ত হচ্ছি- হাত বাড়াও…
স্পর্শ করো; আমরা এক হতে চাই
একটা আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে ডুবে যেতে চাই লক্ষ্ কোটি বছর
একটা স্বপ্ন থেকে উদ্ধার করো বহুস্বপ্ন।
তুমি হো হো হাসি হাসলে;বললে আমি সেন্টিমেন্ট।
হাত ছেড়ে দিলে; ডুবে গেলাম ব্লাকহোলে
এবার হাসছো; উৎসব করছো!?
আমি বলে গেলাম, প্রেমিকার চোখ হলো জাহান্নাম;
অথচ মানুষ ও প্রেমিক এক নয়।

দুই

আমরা দীর্ঘক্ষণ রাঁতের আঁকাশে তাকিয়ে ছিলাম-
ক্লান্ত শহর, কালো কুকুর।
আমরা রাঁতের খুব কাছাকাছি হলাম; বেঁচে থাকলাম।
অথচ আমারা প্রেমিক প্রেমিকা
খুব বেশি চোখের কাছাকাছি; খুব বেশি মনের।

আমরা গ্রহ থেকে গ্রহে বিছিন্ন হলাম
আমরা কিছুক্ষণ হো হো হাসিতে শহরের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম-
আমরা নষ্ট হলাম;
একটা নষ্ট কবিতা লেখা হলো।
একটা নষ্ট বুকে চাপা থাকলো অপরাজিতার ছদ্মনাম।
আমরা অনির্দিষ্ট দূরত্বে চলে গেলাম….

দীর্ঘশ্বাস চেপে চাপা কষ্টে আত্নঘাতী হলো শহর
আমরা মানুষ হলাম; প্রেমিক হলাম।
শুধু কবিতার নামে শোকবাতি জ্বললো শহরে।

তিন

সময় এলে ঝরে যায় বিষাদ;
তোমার নগ্ন হাতে ঝরে যাওয়া গোলাপের পাপড়ি-
আমি কোনো এক মুগ্ধতায় উড়িয়েছি আকাশে।
তারপর;
আমাদের জানা অজানার কতকিছু!
কতভাবে হারিয়েছি মেঘে মেঘে;
কত শুন্যতার ভিতর বসেছে কবিতার আসর।
আমি কেবলই আকাশ হয়ে যায়,
তুমি বরং মেঘ হও; কালো মেঘ।

চার

চলো বুকের ভিতর জমে থাকা কষ্ট নিয়ে খেলি।
আহা! কষ্ট সে তো নির্লিপ্ত সুখের হাহাকার।
সুখের ভিতর দুঃখের জীবন্ত পিরামিড-
ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে শূন্যতা।
স্মৃতির এক বিবর্ণ দুপুর তোমাকে ভালোবেসে গেছে।
তোমার হাহাকারের মধ্যে;
তোমার সুখের মধ্যে-
তোমার চোখে চেয়ে গেছে
হারানো প্রেম।
সুখ
স্মৃতি
অথচ কোন কথা হয়নি।
দীর্ঘ চোখ শুধু চেয়ে গেছে চোখে
অথচ এ কবিতা পুরোনো ডায়েরির দেয়াল।
তোমার মনের না চাওয়া সুখ;
দুপুরে একলা থাকার কথা;
পুরান বইয়ের তাক গুনতে গুনতে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির সুখ বিভ্রাট।
অথচ আমরা হাজার হাজার বছর পিছিয়ে গেছি।
শুধু স্মৃতি!
কষ্টের বাহন বয়ে চলে এপার থেকে ওপার-
তোমার চাওয়া হাসিতে।
আমার না চাওয়া কবিতায়
শুধু বেড়ে চলে দীর্ঘ লাইন।

চলতি সংখ্যা