আদিম

কী কারণে, কী প্রক্রিয়ায়– কোন যানে করে, দোপেয়ো চারজন প্রাণী নদী তীরবর্তী বনাঞ্চলে এসেছে– তা সেখানকার চারপেয়ো প্রাণীগুলো জানে না। তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশায় সমুদ্রসম।

নতুনের আগমন সবসময় শুভদৃষ্টিতে দেখতে হবে– কিংবা দেখা যায়, একথাটা সর্বদা সঠিক– সেকথা ভাবাটা বাঞ্ছনীয় নয়। তবু চারপেয়ো প্রাণীগুলো এই নব প্রজাতির প্রাণীদের সুদৃষ্টিতেই নিল। দোপেয়োগুলো এখানে পদার্পণ করেছে কয়েক দিন হলো। চারপেয়োগুলো তাদের নিয়ে কিঞ্চিৎ শঙ্কিত কিঞ্চিৎ দ্বিধান্বিত– তাদের আক্রমণ করে, ক্ষত-বিক্ষত করে তাড়িয়ে দেবে নাকি তাদের সঙ্গে মিলমিশ করে জীবনযাপন করবে। দু’ সূর্যোদয় পূর্বে অবশ্য তাদের মধ্যে একজন তৃণভোজী চারপেয়ো ওই নব প্রাণীদের সন্নিকটে অগ্রসর হয়েছিল– কই তেমন কিছু তো হলো না! যদিও প্রথমে দোপেয়োদের আচরণে কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত ভাব লক্ষ করা গেল, কিন্তু সেটাকে চূড়ান্ত বলা যায় না। ক্ষণিকের মধ্যে তারা তাদের নিজ কাজে মনোনিবেশ করলো, যেন চারপেয়ো তৃণভোজীটা তাদের মাথাব্যথার কোনো কারণই নয়!

চারজন দুপেয়ো। আটটি পা। আটটি চোখ। আর আটটি কাঁধ থেকে ঝুলে থাকা বিশেষ কিছু– আজব অঙ্গ– দেখতে প্রায় পায়ের মতো হলেও তার কার্যাবলী সম্পূর্ণ ভিন্ন। চারজনের মধ্যে দুজন দেখতে আকৃতিতে বড়, বাকি দুজন ছোট। আকৃতির ভিন্নতা থাকলেও তাদের আচরণ অভিন্ন। তাদের শরীরে পশম নেই, তাই বলে তারা অনাবৃত তাও নয়– কোথা থেকে গাছের লতাপাতা দিয়ে নিজেদের কোমরের নীচের কিছু অংশ আবৃত করেছে দারুণভাবে, বড় দুজনের একজন বক্ষ আবৃত করেছে, আরেকজনের বক্ষ অনাবৃত– সে জন দেখতে বলিষ্ঠ। চারপেয়োরা তাদের আয়োজন দেখে অবাক হয়। তাদের চলাফেরার গতিবিধি, ধরণ, প্রকরণ নিয়ে তারা বিস্তর গবেষণায় বসে। কেউ কেউ হাসে। বিশেষ করে কাঁধ থেকে নেমে আসা ওই যে দুটো জিনিস– তার কার্যক্ষমতা দেখে তাদের অনেকে অবাক হয়।

এখানে এসে দোপেয়োরা এক ধরনের প্রশান্তি পায়, কিন্তু তাদের কপালে দৃশ্যমান বেদনার ভাজ আড়াল হয় না। এইতো কয়েকদিন আগেই তাদের জীবন ছিল শঙ্কায় ভরা, বর্তমানে তারা কিঞ্চিৎ শঙ্কামুক্ত হলেও দুঃখভারাক্রান্ত; স্বজাতির সকলকে হারিয়ে ফেলে ভালো থাকা যায় না, টিকে থাকা যায় না– এ বিশ্বাস তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দুঃখকষ্ট তাদের ভিতরে প্রবলভাবে এখনো প্রভাব ফেলে যাচ্ছে– যা কেবলি তাদের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। তাইতো মাঝে মাঝে তারা সকলে মিলে নদীর কাছে যায়, নদীর জলে নেমে আহাজারি করে, চিৎকার করে বলে– বোঙ্গা…! বোঙ্গাআ…! বোঙ্গাআআআ…..!

চারপেয়োরা তাদের চিৎকার শুনে অবাক হয়ে হুড়োহুড়ি করে ছুটে আসে, দূর থেকে দোপেয়োদের তাকিয়ে দেখে– তারা বিস্মিত হওয়া শেখে। পাগলপনা দোপেয়োরা জলে নেমে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে চিৎকার করতে থাকে অনবরত– চারপেয়োরা ভাবে, বোঙ্গা কী?

বোঙ্গা কী হতে পারে একটা দানব কিংবা অশরীরী শক্তি? দানব, অশরীরীতে চারপেয়োদের অবশ্য ভীতি নেই। তাদের বিশ্বাস দানবকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হত্যা করা যায়, অশরীরী শক্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করা যায়– তবে বোঙ্গা যদি এ দুটোর একটিও না হয়, যদি বোঙ্গা সত্যিই তাদের বিনাশকারী কোনোকিছু হয়; তাহলে তাদের কী হবে– তারা কী করবে? দোপেয়োদের আহাজারিতে এটা তাদের কাছে স্পষ্ট তারা বোঙ্গাকে চাই, তাদের বোঙ্গাকে অতীব প্রয়োজন।

প্রয়োজনই বা হবে না কেন! তাদের বিশ্বাস ওই বোঙ্গাই তাদের বাঁচিয়েছে। তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে– যখন তাদের পূর্বের আবাসস্থল উত্তপ্ত হতে লাগলো, জীবন-যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়লো, তখন তারা গাছের গুড়ির তৈরি জলযানে উঠতে পেরেছিল। তারপর তারা যাত্রা করলো অজানা এক পথে। সেই দুর্গম নতুন আবাস খোঁজার যাত্রাতে তাদের সঙ্গী পঞ্চাশেক জলযান পতিত হলো মহাসংকটে। ঝড় তুফানে। সব শান্ত হলে তারা তাদের আবিষ্কার করে একটা অজানা নদীতে– যার তীরেই তারা এখন নতুন আবাস গড়েছে, যেখানে চারপেয়োদের আধিপত্য– তাই তাদেরকে বসবাস করতে হবে তাদের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে। কিন্তু সেটা কী বাস্তবে সম্ভব– সেকথা দোপেয়ো-চারপেয়ো কেউই জানে না!

বেশ ভালোভাবেই তাদের দিন কাটছিল। বোঙ্গার দেখা নেই। চারপেয়োদের চিন্তা নেই। দোপেয়োরা তাদের কাঁধ থেকে বের হওয়া দুটো অঙ্গ দিয়ে হরহর করে গাছে উঠে গাছের ফল খায়। গাছের ডালপালা দিয়ে কৃত্রিম গুহা বানায়। চারপেয়োরা তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করে, তাদের কার্যকলাপ দেখে আর অবাক হয়। তারা বুঝতে পারে এই দোপেয়োদের কাছে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। একদিন দোপেয়োরা নদীতে গেলে নখরবিশিষ্ট এক চারপেয়ো তাদের কৃত্রিম গুহার রহস্য উদঘাটনে বের হয়। নখরবিশিষ্ট এই চারপেয়োকে অন্য চারপেয়োরা ভয় পায়, কেননা তার ভোজের উপাদান যে কেউ হতে পারে! কিন্তু দোপেয়োদের নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত নেই। দোপেয়োদের আক্রমণেও তার সংশয়। কেননা তাদের মাংসের স্বাদ তার অজানা। এছাড়া তাদের শরীরে কিংবা কামড়ে বিষ আছে কিনা সেটা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। যে বিষয়টা তাকে সবচেয়ে হতভম্ব করে দেয়– সেটা হলো দোপেয়োরা ভয়হীন। সে নিজেও অনেকবার দোপেয়োদের আশেপাশে ঘুরে বেরিয়েছে, কিন্তু দাঁত খিচিয়ে হুঙ্কার ছেড়েও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। দোপেয়োরা শুধু হা করে তার দিকে তাকিয়ে আবার তাদের নিজের কাজে মন দিয়েছে। দোপেয়োদের গুহায় ঢুকে নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো বিশেষ একটি বিষয় আবিষ্কার করে– সেটা হলো আধখাওয়া মাছ ও মাছের কাটা। এর অর্থ হচ্ছে দোপেয়োগুলো নদীর মাছ ধরে কাচা চিবিয়ে খায়! বিষয়টা আবিষ্কার করে নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো আঁতকে ওঠে। তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়। এই দোপেয়োগুলো চারপেয়োদেরকেও ভক্ষণ শুরু করবে না তো! কৃত্রিম গুহা দেখে বের হতেই নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো দেখে দোপেয়োরা শান্তশিষ্টভাবে ফিরে আসছে, কিন্তু তাকে লক্ষ করেই তাদের আচরণ পাল্টে গেল। তারা আজব অঙ্গের সাহায্যে গাছের ডাল তুলে তেড়ে আসতে লাগল। চারপেয়ো দোপেয়োদের অকস্মাৎ আক্রমণাত্মক এমন আচরণে ভড়কে যায়! সে ছুট দেয় সজোরে। দোপেয়োরা তার সাথে দৌড়ের পাল্লাতে পারে না।

ঘটনাটা পুরো চারপেয়ো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো তাড়া খেয়েছে দোপেয়োদের কাছে– বিষয়টা চারপেয়োদের কাছে চরম আতঙ্কের। এমন সাহস যে বা যারা করতে পারে তারা কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ওদিকে মাছের কাটার কথাও তাদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয়। তারপরেও দোপেয়ো চারপেয়োদের মিলমিশ জীবনযাপন চলতে থাকে– এক নদীতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জলপান তার অনন্য উদাহরণ। তবে চারপেয়োরা ওই ঘটনার পর থেকে দোপেয়োদের কৃত্রিম গুহার দিকে আর পা বাড়ায় না, দোপেয়োরাও আর তেড়ে আসে না।

এভাবে বহুক্ষণ যায়। বহুবার সূর্য অস্তমিত হয়। নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো তাগড়া হয়। তার জীবনসঙ্গী হয়। তার দুটো বাচ্চা হয়। এরপর আসে সংকট। সূর্য তাপ বাড়াতে থাকে। নদীর জল শুকাতে থাকে। গাছের পাতা শুকাতে থাকে। গাছে ফল উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। অনাবৃষ্টির কাল আসে– যেটা চারপেয়ো দোপেয়োদের জন্য মহাসংকটের শুরু করে।

এমন অসময়ের এক সূর্যোদয়ের মূহুর্তে ঘুম থেকে হুড়মুড় করে ওঠে ছোট দোপেয়োর একজন। তার চোখদুটো যেন ঠিকরে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে কোটর থেকে, শরীর ঘেমে একাকার, সাথে দীর্ঘশ্বাস। বড় দোপেয়োরা তার কাছে আসে, তাকে আজব অঙ্গ দিয়ে ঝাঁকি দেয়। সম্বিৎ ফিরে পায় ছোট দোপেয়ো। ইশারা ইঙ্গিতে তারা ছোট দোপেয়োর কাছে জানতে চায়– কী হয়েছে? ছোট দোপেয়ো আতঙ্কগ্রস্তভাবে তাদের দিকে তাকায়। ভীতসন্ত্রস্তভাবে ইশারায় যা ইঙ্গিত করে– তার তীর নখরবিশিষ্ট কোনো এক প্রাণীর দিকে যায়। নখরবিশিষ্ট কোনো প্রাণী তার দিকে এগিয়ে আসছে, তারপর তাকে রক্তাক্ত করছে। এমন ঘটনাই সে ঘুমের মাঝে প্রত্যক্ষ করে। কয়েকদিন আগেই ওই ছোট দোপেয়ো দেখেছে– কীভাবে নখরবিশিষ্ট সেই চারপেয়োটি অন্য চারপেয়োদের ছিঁড়েছুটে খায়। এজন্যই সে ভয়ঙ্কর কিছু ঘুমের মাঝে দেখেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না– কিন্তু দোপেয়োরা তার কাছে ইশারায় বিষয়টা জেনে নিজেরাও ভীত হয়ে পড়ে। কৃত্রিম গুহা থেকে বেরিয়ে মাটির উপর বসে তারা বুক চাপড়াতে থাকে আর বলতে থাকে– বোঙ্গা! বোঙ্গাআ…! বোঙ্গাআআআ…..! তাদের চিৎকারে অন্য ছোট দোপেয়ো জেগে ওঠে। সেও দৌড়ে কৃত্রিম গুহা থেকে বের হয়ে আসে, তাদের সাথে চিৎকারে সামিল হয়। গগনবিদারী সেই চিৎকার!

সেই সূর্যোদয়ের পর থেকে দোপেয়োরা তটস্থ হয়ে ওঠে, তারা যখন তখন যেখানে সেখানে গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকে আর কাঁদতে থাকে– সেটা নদীতে হোক, কৃত্রিম গুহায় হোক কিংবা বনাঞ্চলের মাঝখানে হোক। তাদের ঘন ঘন চিৎকার-কান্নায় চারপেয়োরা বোঙ্গা সম্পর্কে পুনরায় ভাবনায় পড়ে যায়। দোপেয়োদের নতুন নতুন আচরণ তারা প্রতিনিয়ত লক্ষ করতে থাকে। সেই অস্থির সময়ে দোপেয়োরা পুরো বনাঞ্চল চষে বেড়াতে থাকে– যেন তারা কোনো কিছু খুঁজছে। তাদের হারিয়ে যাওয়া কিছু। এরপর এক দুপুরে বলিষ্ট দোপেয়োটি অর্ধশুষ্ক নদীর দিক থেকে লাফাতে লাফাতে গুহার দিকে আসে, তার চোখেমুখে আনন্দধারা। তাকে আসতে দেখে বাকি সবাই কৃত্রিম গুহা থেকে বেরিয়ে আসে, তারা দেখে– বলিষ্ট দোপেয়োর হাতে দুই খণ্ড কর্দমাক্ত শক্ত বস্তু। তাদের মুখও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কর্দমাক্ত শক্ত বস্তু দুটিকে তাদের মাঝখানে রেখে তারা আজব ভঙ্গিমা করতে থাকে– যে ভঙ্গিমাকে আনন্দ প্রকাশক কিছু একটা বলা যেতে পারে। সেই ভঙ্গিমা করতে করতেই তাদের একজন তার এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতে আঘাত করে– সাথে সাথে সৃষ্টি হয় এক আনন্দদায়ক শব্দ, এরপর তার অনুকরণে অন্যরাও নিজেদের হাত দিয়ে সেই আনন্দসূচক শব্দ সৃষ্টি করে। মুখরিত হয় নদী তীরের আদিম এক আবাসস্থল– যেন বোঙ্গা ফিরে এসেছে।

তাদের এই আনন্দমাখা মূহুর্ত চারপেয়োদের আগোচরে থাকলো না। বিশেষ করে নখরবিশিষ্ট সেই চারপেয়োটি সবসময়ই তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করে চলে। সেদিন সন্ধ্যাতেই দোপেয়োদের কৃত্রিম গুহার ভিতরে আলোকরশ্মি দেখা গেলো। নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবার জন্য সেই গুহার সম্মুখে আসতেই যা দেখতে পেল– তাতে তার আত্মারাম উড়াল দেবার অবস্থা! আকাশের সূর্য ঘরে নিয়ে এসেছে দোপেয়োরা। প্রকৃতির দেবতা সূর্য কী তাহলে দোপেয়োদের দাস নাকি সূর্যদেবতার সন্তানকে চুরি করেছে বজ্জাতেরা– নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো সন্ধিহান!

তার কয়েক সূর্যোদয়ের পরের ঘটনা। অনাবৃষ্টি শেষ হয়েছে। আশার আলোয় উদ্ভাসিত সবাই। দোপেয়োদের ঘরে রাত্রিবেলা সূর্যদেবতার সন্তান বসবাস করে। দোপেয়োদের “বোঙ্গা! বোঙ্গা!” আর্তনাদ কমে এসেছে। এখন শুধু তারা শক্ত বস্তু দুটোকে ঘিরেই আনন্দে মাতে– অবস্থা এমন যেন তারা বোঙ্গাকে ভুলেই গেছে। নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো ভাবে, সূর্যদেবতাই তাদের বোঙ্গা!

অথচ তার ধারণা ভুল। সেই ছোট দোপেয়োটি হঠাৎ আরেক সূর্যোদয়ের সময় ঘুম থেকে ওঠে অস্থিরভাবে। আগের মতোই দোপেয়োরা গুহা থেকে বেরিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় “বোঙ্গা” রবে আর্তনাদ করে। সেই আর্তনাদের শব্দ শুনে নখরবিশিষ্ট চারপেয়ো দূর থেকে তাদের দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। সেই সময় সে একটু দৃষ্টি সরিয়ে দেখে, তার বাড়ন্ত বাচ্চাদের একটি দোপেয়োদের কৃত্রিম গুহার পাশ দিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে– যাকে দেখে দোপেয়োরা তটস্থ হয়ে ওঠে, বলিষ্ট দোপেয়ো “বোঙ্গা” আর্তনাদ বন্ধ করে কৃত্রিম গুহায় প্রবেশ করে। ফিরে আসে তীক্ষ্ণ-ছুঁচালো একটা গাছের ডাল নিয়ে। ফিরে এসেই দোপেয়ো নখরবিশিষ্ট চারপেয়োর বাচ্চার দিকে অগ্রসর হয়। চারপেয়োর বাচ্চার সেদিকে নজর নেই– তার চিন্তাতেই নেই দোপেয়োরা তাকে আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু কিছুসময় পরেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে ছুঁচালো গাছের ডাল। মূহুর্তেই থেমে যায় বাকিদের আর্তনাদ, তাদের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। তারা চারপেয়োর নিথর দেহের চারপাশে অবস্থান নেয়, বলিষ্ট দোপেয়ো বুক চাপড়ায়, নখরবিশিষ্ট চারপেয়োর বাচ্চার গায়ে গাছের ডাল গেঁথে তার চারপাশে আজব ভঙ্গিমায় আনন্দ প্রকাশ করে। তারা আবার ভুলতে বসে বোঙ্গার কথা।

দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখে অনুসন্ধিৎসু নখরবিশিষ্ট সেই চারপেয়োটি– যার সন্তান কয়েকমূহুর্ত পূর্বেই দেহত্যাগ করেছে এক দোপেয়োর খোঁচায়।

© মোস্তাফিজ ফরায়েজী

চলতি সংখ্যা