পাকা পেঁপের বদমায়েশি

‘পাখি পাকা পেঁপে খায়’ শিরোনামে একটা গান আছে তবে তা আমার পছন্দের গান ছিল না কখনো। পাকা পেঁপে, কাঁচা পেঁপে কোনো পেঁপের প্রতিই আমার আগ্রহ ছিলনা কোনোকালে। ব্লগার নির্ঝরের পাকা পেঁপে নামক স্যাটায়ার পড়ে পাকা পেঁপের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায় এবং পাকা পেঁপে আমাকে গ্রাস করে ফেলে । খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার দাদা এবং তার পূর্বপুরুষেরাও পেঁপে চাষ করতেন বসতবাড়ি এবং লাগোয়া পতিত জমিতে। তারা পাকা পেঁপে দিয়ে উদরপূর্তি করতেন। কিন্তু তাদের এই পেঁপে ভোজনের ধারা আমার বাবা পর্যন্ত সচল ছিলনা কোনো এক অজ্ঞাত কারনে। এই জন্য বাবাকে পেঁপে নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি উল্লেখ করার মতো কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু আমার মাথায় পাকা পেঁপে সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসায় আমি অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না । পেঁপে নিয়ে শুরু করি লেখাপড়া। কিন্তু বাজারে প্রচলিত বইয়ে পেঁপে সম্পর্কিত মনঃপুত তথ্য না পেয়ে আমি অধিক তথ্যসমৃদ্ধ বইয়ের সন্ধান করি নীলক্ষেতে। মধুমতি বই বিতানের আব্দুল মতিন আমাকে আখাউড়ার মগন শাহের সংগ্রহে থাকা এক দূর্লভ পুস্তকের কথা বলেন ।

পরদিনই আমি কমলাপুর থেকে আখাউড়ার ট্রেনে চেপে বসি। মগন শাহকে খুজে পেতে বেশি বেগ পেতে হয় না। সাতশ টাকা দিয়ে পেঁপে শাস্রের একখান উচ্চমার্গ বই কিনে মগন শাহের আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরি। পেঁপে শাস্র পাঠ করতে করতে আমার অন্তর্জগতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। সচিত্র বিবরনীসহ পেপের এক হালুয়ার ফিরিস্তি আছে শেষ দিকে। হালুয়ার গুনাগুনে বলা হয়েছে পুরুষ হবে সিংহের মতো আর পুরুষের সিংহল সোহাগের দাপটে রমনীগণ হবেন অধিক উর্বরা, অধিক কাম সঞ্চারিনী।

রাস্তার ক্যানভাসারদের মতো চটুল মনে হলো একবার। তথাপি আমার বউয়ের সাথে জোট বেঁধে শুরু করলাম হালুয়া তৈরির কাজ। হালুয়া বানানোর মাঝামাঝি অবস্থাতেই ফেসবুকে ‘পাকা পেঁপে অমনিবাস’ নামে ক্লোজড গ্রুপ খুলে আমার বিবাহিত বন্ধু বান্ধবীদের সেইখানে এড করে হালুয়ার গুণকীর্তন করে নিয়মিত আপডেট দিতে লাগলাম। প্রত্যাশার চাইতেও বেশি সাড়া দেখা গেল। ইনবক্স সয়লাব হয়ে গেল হালুয়া যথাসময়ে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে। প্রথম দফা হালুয়া হস্তান্তরের পর কিরকম প্রতিক্রিয়া হয় তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলাম আমি আর আমার বউ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে জনতুষ্টি দেখা গেল সর্বত্র। দ্বিতীয় কিস্তির চাহিদা প্রথম কিস্তিকে ছাড়িয়ে গেল কয়েকগুন । এইভাবে পুরুষেরা সিংহবেশে তাদের শয্যাসহচরদের অধিক উর্বর করে তুলল।

তৃতীয় কিস্তি সরবরাহ সম্পর্কিত আপডেট ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করতেই শুরু হল এক নতুন ঘটনা। বন্ধুগন ইনবক্সে আমন্ত্রণ জানালো। কেউ কেউ সরাসরি সাক্ষাৎ চাইলো।

আলাপে বোঝা গেল বন্ধুগনের শয্যাসহচারীরা এখন অধিক উর্বরা হওয়ার কারনে ভীষন উশখুশ করছে।  ইতোমধ্যে কয়েকজন অধিক রতিশক্তিসম্পন্ন এবং শৌর্যশালী শয্যাসহচর খুঁজে নিয়েছে। আমার দীর্ঘদিন পাকা পেঁপে ভোজনের ইতিহাস শুনে উশখুশ রমণীগণের কেউ কেউ আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন খবরও শোনা গেল।

খিল আটকানো ঘরে বসে থাকি আমি; বউ চোখের আড়াল হতে দেয় না। ফেসবুক গ্রুপ পুরোপুরি ডিজেবল করে দেয় সে  ।  

আমি এখন তিন বেলা নিয়ম করে বউয়ের সাথে বউ বউ খেলি। বউ মাগন শাহর কথা বলে। আমি বলি, ‘জয় বাবা মাগন শাহ!’ বউ বলে, ‘জয় হালুয়া!’

 

– জামাল হোসেন

চলতি সংখ্যা