বসন্ত

হাসেম কাঠ বাগানের নিচে বসে ভাবছে,  গাছের পাতা চির সবুজ,  চারদিকে পাখির কলরব, মনে হয় বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতি এখন অপরুপ সাজে সাজবে। হসেম এর মনে উঁকি মারছে তাহেরপুর এর শিমুল বাগান আর সিলেটের চা বাগানের কথা এবং  কুয়াকাটার নারকেল গাছের সারির কথা।  গতকাল তার সহকর্মী বলল চলো কোথাও ঘুরে আসি,

– না ভাই মন আর আগের মতো সায় দেয় না

প্রকৃতি আগের মতোই সাজে, কিন্তু মনটা আর সাজে না। যখন একাদশ শ্রেণিতে পড়তাম,  মনে উল্লাস ছিল।  রফিক বলেছিল সিলেট যাবে,  সোজা তৈরি হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চলে গেলাম। 

রফিক ছিল ভাই এর মতো। শাহ্ আলম খুব কছের বন্ধু ছিল একসাথে অনেকটাই ঘোরা হতো। শাহ আলমের মতো অনেকে আছে জীবনে। সুনামগঞ্জ এর ভিতর দিয়ে যখন গাড়ি চলছিল তখন মনে হয়েছিল প্রকৃতি আমায় ভালবাসে, তার ভালবাসার টানে আমি ছুটে এসেছি। যখন সবাই মিলে ক্যামেরায় বন্দি হতাম তখন মনে হতো প্রকৃতি আমায় ভালোবাসে। শাহ্ আলমকে ফোন করলাম সে এখন কাজের প্রচন্ড চাপে আছে, কিছুদিন হয়েছে বাবাকে হারিয়েছে। “মামা” বলে ডাকতাম। বসন্তের রসতো প্রতি বছর সাজে, কিন্তু জীবনের রস কী ফিরে আসে? সিমুল এর কথা জিজ্ঞাসা করতে বলল তার এখন অনেক টাকা,  বাবার মৃত্যুর পর কিছু টাকা হাওলাদ এর জন্য যাই।  ঠিক মতো আমায় চিনতে পেরেছিল এটাই ভাগ্যের ব্যাপার। তবো ভাগ্য তার বাসার চা জুটেছিল, অথচ এক সময় কত টাকা ব্যয় করত আমাদের পিছনে প্রতিটা মূহুর্ত ছিল আমাদের সাথে।  আবিদ এগিয়ে এসেছিল ৫০০০ টাকা দিয়েছিল তার এই অভাব অনটনের পরিবারের মধ্যে এটাই অনেক।

তোর মতো ছোট বেলা থেকে নিজের পরিবারের ভার নেয় ও। ছোটবেলা থেকেই আবিদ টিউশন করত পড়ার পাশাপাশি, পরিবারটা ছিল বড়, বাবার আয়-ব্যয় নেই, হিমশিম খায় তার খরচ চালাতে, ভাত খেতে ভাত জোটেনা। মেধা থাকলেই কী আর পড়ালেখা হয়? 

আবিদ এর সাথে তাবলিগে পরিচয় হওয়াটা ছিল ভাগ্যের ব্যাপার, তোকে বলেছিলাম না আবিদের জীবনটা পুরাই তোর মতো। আমি তাকে আহসান এর কথা জিজ্ঞাসা করলাম, আহসান তো এখন মরণ রোগে ভুগছে, কত বলতাম আমরা সিগারেট খাস না, খাস না। কিন্তু মনে যা ধরে তা কি ছাড়া যায়? যদিও জীবন বিপর্যয় হয়। তবে কষ্ট হয় আহসানের পরিবারের জন্য, কত কষ্ট করে টাকা পয়সা জোগাড় করে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করলো, টাকাগুলোতো শিয়াল কুকুররা খেয়ে ফেললো!!  জীবনটা বড়ই পরিহাস!  বসন্ত কী আর সব সময় থাকে?  বন্ধু আজ আর নয় অনেক রাত হয়ে গেছে।

হাজারো বন্ধুর মাঝে তোর সাথেই শুধু এখনও সম্পর্কটা আছে সেই ছোট বেলা থেকে। যদি বসন্ত সব সময় থাকত তবে মানুষ এর মূল্যায়ন করত না।  প্রতিটা ঋতু মানুষকে অবাক করে দেয়!  গ্রীষ্মের ধুলা আর প্রচন্ড গরম,  বর্ষার বৃষ্টি,  মানুষ যখন পাবে,  তখন বুঝবে বসন্তের মূল্য,  প্রচন্ড শীতে গাঁ শিওরে উঠলে বুঝবে বসন্তের মূল্য।  বসন্তটা বড়ই নিষ্ঠুর দুঃখ তো বাড়িয়ে দেয়  তার সৌন্দর্য দিয়ে। হৃদয় বসবাস করে বসন্তের স্মৃতি, তোর মনে আছে- রোকেয়ার কথা? রোকেয়ার সাথে যখন সবুজ বাগানের মধ্যো দিয়ে হাটতাম তখন তুই পাহাড়া দিতি কেউ যেন দেখে না ফেলে। গত বসন্তে তাকে হারিয়ে এই বসন্তের সাধ আর মনে জাগে না। তবে শুনেছি প্রথম কয়েকদিন আমার জন্য কান্নাকাটি করলেও এখন সুখেই আছে কিছুদিন পর মা হবে! প্রকৃতির অপরূপ লিলা-খেলা যেমন চলতে থাকবে, নদীতে জোয়ার ভাটা যেমন চলতে থাকবে, জীবনের সুখ দুঃখও বইতে থাকবে, গ্রীষ্ম কী শুধু গরমের জ্বালা দেয়?  নানারকম ফল এর কথা তো আর অস্বীকার করতে পারি না! ৩ বছর হয়ে গেল প্রবাসে এসেছি, যাকে পাওয়ার জন্য জীবন সমুদ্রে পারি দিলাম সে কিছুদিন পরে মা হবে। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, মাস শেষে টাকা পাঠাই এটাই তাদের সুখ, অনেকটা সময় কাটে এই কাঠ বাগানের নিচে বসে। এই বসন্ত উপভোগ করতে না পেরেছি,  হয়ত আগামি বসন্ত আমায় ভালবাসবে!

© নাজমুল ইসলাম শেখ

চলতি সংখ্যা