মা ও ছেলের গল্প

চৈত্র মাস। দুপুরবেলার ঝাঁঝাল রোদ নেমে আসছে মাথার ওপরের খোলা ঝকঝকে মেঘমুক্ত আকাশ থেকে। আর ঝাঁঝাল রোদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে খরার রূপ ধারণ করেছে। চৈত্র মাস খরার মাস, সবকিছুতেই শুকনো খরখরে ভাব। একবিন্দু বৃষ্টি যে আসবে তার কোনো লক্ষণ নেই। গোটা আকাশে যতদূর দু’চোখ যায় এক চিলতে কালো মেঘ নেই কোথাও। বৃষ্টির কোনরকম ভাব নেই দুনিয়ায়, দূর আকাশ থেকে মাটিতে নামার যেন খুব একটা ইচ্ছাও নেই তার। সেই অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝির দিকে প্রকৃতি শীত টেনে আনার জন্য এক রাতে মেঘ খানিকটা গুড়–ম-গাড়–ম শব্দে ডেকে নেচে-কুর্দে খানিকটা বৃষ্টি ঢেলে দিয়েছিল মাটিতে। পরদিন সকালবেলায় সেই বৃষ্টির ছিটায় বেশ ঠান্ডা ভাব দেখা দিলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির জল শুকিয়ে মাটি ধুলোয় পরিণত হয়েছিল। শীতকালে শীত নামলেও যেই শীত পার হলো অমনি আবার যেই- সেই অবস্থা।

আর এমন কটকটে সূর্যের আলোয় খরার দুপুরে খোলা উঠানে কে-ই বা শুধু শুধু বসে থাকে। কিন্তু বসে আছে মা অমলা। সন্দেহের চোখে আকাশের দিকে বার দুই তাকিয়ে মেঘের ভাব দেখে বসে আছে মা অমলা। বলা যায় এসময়টায় তেমন কোনো কাজ থাকে না তার হাতে, এমনিতেই বসে আছে সে। তার শোবার ঘরের সামনের এই জায়গাটায় একটা ন্যাড়া কুলগাছ অসহায়ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে, তার শাখায় একটা পাতার চিহ্ন পর্যন্ত নাই। দিন দুই আগে পাতাসহ ডালপালা ছেঁটে দিয়েছে ছেলেরা। ডাল-পাতা থাকলে এতক্ষণ এখানে খানিকটা ছায়া থাকত। মাঝ-উঠান বরাবর লম্বা একটা ছায়া পড়েছে, ঘরের পেছনের দিকের নারকেলগাছের ছায়া। চৈত্রের প্রকৃতির মতো মা অমলারও বুকটা খরায় খরখরে। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বুকটা থেকে থেকেই ছটফট করছে। প্রাত্যাহিক কাজকর্ম সেরে সকালে গরম দুটো ভাত খাওয়ার পর তার সাংসারিক তেমন কোনো কাজ থাকে না, আজও তেমনি নেই। খুব সকালে মানে রাত শেষ হওয়ার পরপরই যখন কিচির-মিচির শব্দে পাখ-পাখালি, মোরগ-মুরগি ডাকাডাকি শুরু করল তখনই ঘুম ভেঙেছে তার। তখনো বাড়ির অন্যদের ঘুম ভাঙেনি। তারপর অভ্যাসে পরিণত হওয়া রুটিন মাফিক নিজের ঘরদুয়ার পুরো উঠান ঝাড়-ঝাট দিয়েছে। গোবর-জল দিয়ে ঘরের মেঝে লেপেছে, উঠানে গোবরজলের ছিটা দিয়েছে। তারপর রাতের এঁটো বাসন-কোসন যা দুই-চারটা তার ছিল তা ঘষে-মেজে ধুয়ে বাড়ির টুকটাক আরো কিছু কাজ সম্পন্ন করতে করতেই সূর্য উঠে পড়েছে। তার বাড়ির ছোট খোলা উঠানে সকালের টাটকা সেই সূর্যের সেই আলো ছড়িয়ে পড়ার পর পরই তার বড়ছেলে, বড়ছেলের বউ উঠলেও তাদের ছেলেমেয়েরা তখনও বিছানা ছেড়ে ওঠেনি। মেজছেলেটাকে সে বেশ সকালেই একবার উঠতে দেখেছিল, সে পরক্ষণেই আবার গিয়ে বিছানায় শুয়েছে। আর ছোটছেলেটা… ছোট ছেলে সুব্রত… ছেলেটার কথা মনে আসতেই বুকটা ব্যথায় মোচর দিয়ে ওঠে। কানের কাছে আচমকাই ট্রেনের পোঁ-ও-ও… পোঁ-ও-ও হুইসেল বেজে ওঠে। বাজতেই থাকে অবিরাম, বাজতে বাজতে দূরে ছুটে চলে যেতে থাকে। মা অমলার আর সেই হুইসেলের পেছনে ছুটে চলা হয় না, বলা যায় তার নাগাল সে পায় না। একসময় তা বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। আজ কতো দিন? কতো দিন হল তার কোনো খোঁজ-খবর নেই। কয় বছর হলো? গোনাগুণতি নেই তার, জানাও নেই কত বছর হলো ছোটছেলেটার হারিয়ে যাওয়া। তবে এইটুকুই মনে আছে চৈত্রমাসের এরকই এক দিনে ছেলেটাকে সে কোলছাড়া করেছিল। আর ফিরে পায়নি সে। মা অমলার চোখ দুটো ভিজে ওঠে, চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই কাপড়ের আঁচলে তা মুছে ফেলে তড়িৎ বেগে। ঘরের বারান্দা থেকে বড়ছেলে সুরেশের বউ চেঁচিয়ে ওঠে, ওখ্যান থিক্যা এট্টু সর‌্যা বসেন না ক্যা? কী কটকট্যা রোদ পড়িছে, আর ঐ রোদেই…

বছর দুই-আড়াইয়ের নাতিটা গুটি গুটি পায়ে তার কোলে এসে বসে। অমলা নাতিটাকে আদর করে মাথায় কাপড়ের আঁচলটা তুলে দিয়ে রোদ থেকে ঢেকে রাখে। বছর ছয়/সাতের সুব্রত হারিয়ে যাওয়ায় বাড়িতে খানিকটা হৈ-হুল্লোর কান্নাকাটির রোল পড়ে গেল সেবার। মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে স্টেশনে ট্রেনে ওঠার সময় হঠাৎ কী করে যে কী হয়ে গেল সে আজও বুঝে উঠতে পারে না। ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে সে ট্রেনে ওঠার পর দেখে তার কোলের ছেলেটা নেই, নেই তো নেই কোথাও নেই। ট্রেন থেকে ফের নেমে এখানে সেখানে খুঁজেছিল, আবার ফের ট্রেনে উঠে খুঁজেছিল, আবার নিচেও। এভাবে কতবার উঠেছিল আর নেমেছিল সে আর মনে করতে পারে না। একসময় ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠেছিল, সেই সাথে চাকাও সচল। ট্রেন ধীরে ধীরে সামনের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল। ট্রেন যেন তার সাথে সাথেই দৌড়ায়। নাহ, এতো সামনে তো না। অমলা ফের পেছনের দিকে ঘুরে তাকায়। পেছনেও কিছু ঠাওর করতে পারে না। তার মাথা মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে যায়। ট্রেনের গতি বাড়লে অমলা একবার সামনে একবার পেছনে দৌড়ায়। চোখের সামনে দিয়ে জানালাগুলো দরজাগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে। জানালায় ছুটন্ত মুখ- ছুটন্ত হাত- ছুটন্ত শূন্যতা। হঠাৎ অমলা লক্ষ করে একটা হাত যেন তাকে ডাকছে, জোয়ান বেটাছেলের হাত। এবার দুই হাতে তাকে ডাকছে। তাকেই কি ডাকছে? অমলা সামনের দিকে ছুটে চলে প্রাণপণে। ট্রেন তার দৌড়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে যাচ্ছে, সে শেষ চেষ্টা করে ফের- এভাবে দৌড়ালেই ধরা যাবে হয়তো। এই বয়সে এর চেয়ে আর কোনোভাবেই-বা দৌড়ান যায়। তার মুখের সামনে দিয়ে ট্রেনের দরজা ছুটে ছুটে যায়। অমলা সে দরজা ছুঁতে যায়। হঠাৎ তার হাতটা কে যেন পেছন থেকে টেনে ধরে। দেখতে দেখতেই নাগালের বাইরে চলে যায়। ট্রেন অমলাকে না নিয়েই স্টেশনের প্লাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তার ছেলেকে যে পাওয়া গেল না? অমলা দিকশূন্য হয়ে সামনের দিকে দৌড়ায়, আমার ছাওয়াল… আমার ছাওয়াল… ট্রেনে আমার ছুটু ছাওয়ালা চল্যা গেল…

অমলা চিৎকার দিয়ে ডাক ছাড়লে আশ-পাশের লোকজন তার দিকে ঘুরে তাকায়। যে লোকটা তার হাত ধরে চলন্ত ট্রেনে উঠতে বাধা দিয়েছিল সে হাত ছেড়ে দিয়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়ায়। উত্তেজিত হয়ে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করে, কী হইছে, কী হইছে?

ট্রেনের ছুটন্ত পেছনদিকটা তখনো দেখা যাচ্ছে। অমলা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে প্লাটফর্মে, ট্রেনের মধ্যে আমার ছুটু ছাওয়াল চল্যা গ্যালো… ট্রেনের মধ্যে আমার… অমলা বিলাপ করতে থাকে। অনেকে তাকে সান্ত¦না দেয়, কেউ দেয় বুদ্ধি, যে কর‌্যাই হোক পরের ইস্টিশনে যান, পরের ইস্টিশনে ট্রেন তো থামবিই। কেউ সাহস দেয়, কানইন্দেন ন্যা, দেখি কী করা যায়।

স্টেশনে ঘন্টা দুই-তিনেক ধরে বসে কেঁদে-কেটে আসলে কিছুই করা গেল না। দু-চারজন তার সাহায্যে এগিয়ে এলেও শেষমেষ কোনো বুদ্ধি না পেয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে চলে যায়। মেষ পর্যন্ত নিজেও একাকী বোধ করলে বাড়িতে থাকা বড় দুই ছেলে, বিয়ে হয়ে যাওয়া তিন মেয়ে- মেয়েজামাইদের কথা মনেকরে অমলা ভগ্ন মনে উঠে দাঁড়ায়। বাড়ি ফেরার তার একটাই পথ- ট্রেন। পরবর্তী ট্রেনের আশায় থাকে অমলা

শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকে পাওয়া যায়নি কোথাও। সেই থেকে মা অমলার নাওয়া-খাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মেয়েরা খবর পেয়ে জামাই, ছেলে-মেয়ে সঙ্গে করে এসে সেকি কান্নাকাটি। ছোটভাইয়ের শোকে কাতর তারা। বড় ভাই দু’টো ছোট ভাইটার খোঁজে প্রতিদিন সকালবেলা বেরিয়ে যায়, খালি হাতে ফিরে আসে সন্ধ্যা নাগাদ। ইয়াসিনপুর, নাটোর, বাসুদেবপুর, নলডাঙ্গা… স্টেশনগুলোতে খোঁজ খবর করে। আশে পাশের বাড়িতে বা গ্রামগুলোতেও ঢুকে পড়ে। কিন্তু খোঁজ মেলে না। কেউ হদিস দিতে পারে না। গ্রামের বা এলাকার লোকজন ব্যবসার কারণে বিভিন্ন হাটে-বাজারে যায়, তাদেরকে তারা বলে রাখে একটু খোঁজ করতে বা পারতঃপক্ষে সংবাদ পেলে যেন তাদেরকে একটু জানায়। সপ্তাহখানিক ধরে চলল এখোঁজাখুঁজি। তারপর ভগবানের ওপর ছেড়ে দিয়ে দুই ভাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে মা অমলারও শোক খানিকটা থিতিয়ে আসে। সারা সপ্তাহ ধরে পাড়ার বৌ-ঝিরা এসে তাকে সান্ত¦না দেয়, খুঁজাখুঁজি তো আর কম হল না। ছুটু ছাওয়াল কোত আছে তার ঠিক আছে কী? কী আর হোবি, কপালে ছিল…। ভগবান যদি দেয় তো ঘরের ছাওয়াল আবার ঘরে ফির‌্যা আসপি।

২.

ভগবান ঘরের ছেলেকে একদিন ঘরেই ফিরিয়ে দেয়। আচমকা সুব্রত ফের মানুষের মুখে মুখে খবরের শিরোনাম হয়। সুব্রত ফিরে আসে নিজ গ্রামে, নিজ বাড়িতে। সুব্রত যখন মায়ের কোলে ফিরে এলো তখন তার বয়স ছয় যোগ তেরো, মোট ঊনিশ। তেরো বছর পর সুব্রতর গ্রামের বা বাড়িতে বা মায়ের কোলে ফেরাতে এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। দলে দলে লোকজন আসছে সুব্রতকে এক নজর দেখার জন্য। গ্রামের ছেলে রেকাত আলী প্রথমে সুব্রতর খোঁজ পায়, তারপর তার মা ভাইকে জানায়। রেকাত আলী ব্যবসার কাজে এখান-সেখানে এহাট-ওহাট চষে বেড়ায়। আর এই চষে বেড়াতে বেড়াতেই আচমকা একদিন আহসানগঞ্জ স্টেশনের পাশে এক মিষ্টির দোকানে সুব্রতকে আবিষ্কার করে ফেলে। সুব্রত সে-দোকানের কর্মচারী, চা বানানোর কারিগর। সারাদিন দোকানে কাজ করে রাতে মালিকের বাসায় ঘুমায়। তার বন্ধু সুরেশের চেহারার সাথে ছেলেটির মুখের গরনে অসম্ভব মিল দেখে দোকানদারকে বললে দোকানদার সংক্ষেপে শোনায় তাকে সুব্রতকে ছোটবেলায় হাতে পাওয়ার গল্প। রেকাত পরক্ষণেই মালিককে শোনায় তার মনের কথা। তারপর মা ভাইকে নিয়ে রেকাত আলী যায় সেই জায়গায়। সুব্রত সনাক্ত হয়, মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, দোকানের মধ্যে তখন এক সিনামার মতো ঘটনার অবতারণা হয় এবং সুব্রত মা ভাইয়ের সাথে ফিরে আসে গ্রামে নিজ বাড়িতে। তাকে দেখার জন্য গাঁয়ের লোক ঢল নামায় অমলার বাড়িতে। সকলেই তাকে আগ্রহভরে দেখে, দীর্ঘ তেরো বছর পর তাকে সকলেই দেখে চমকিত হয়। বিস্ময়ে সকলের মুখে একই কথা ফুটে ওঠে, কত্তো বড় হয়্যা গ্যাছে রে…!

৩.

সন্ধ্যার দিকে সুব্রত ঘুম জড়নো চোখ নিয়ে ফের শোবার আয়োজন করে। মা অমলা কিছুক্ষণ আগে তাকে কাঁচাঘুম থেকে জাগিয়ে টেনে তুলেছে। সে আজ দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরেছে। এখনও তাকে দেখার জন্য লোক আসছে বাড়ির ওপর। তাদের সামনে বের হতে তার কেমন লজ্জা লজ্জাও করছে, তবু বের হতে হচ্ছে। আর ফেরার পর থেকেই মা যখনই সময় পাচ্ছে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মা যখন যা পাচ্ছে তখন তাই নিয়ে আসছে সামনে, এইড্যা খা, তুই তো খুব পছন্দ করতু, দ্যাখ সুন্দর কর‌্যা রান্দিছি…

সুব্রতর তখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না, তারপরেও দীর্ঘদিন পর নিজের বাড়িতে ফিরে এসে মায়ের পীড়াপিড়িতে একটু একটু করে খাচ্ছে। আর সারাদিন পর এই সন্ধ্যার পর একটু চোখ বুঁজেছে কী তো আর খাওয়ার পীড়াপিড়ি শুরু করেছে মা। মা তার জন্য কয়েক পদের পিঠা পুলি বানিয়েছে, গরুর দুধের পায়েস করেছে, চাউলের ময়দার নরম রুটি ছোটবেলা সে খুব পছন্দ করত- সেটাও বানাতে ভোলে নি মা। সুব্রত বসে বসে খায়, মা চেয়ে চেয়ে তার খাওয়া দেখে।

রাতে মা আরো অনেক কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনতে চায়। তার তেরো বছরের কথা। স্টেশনে কীভাবে সে মায়ের কাছছাড়া হয়েছিল, হারিয়ে গিয়ে কোথায় উঠেছিল, যে-বাড়িতে সে ছিল সে-বাড়ির মানুষেরা তাকে কেমন রেখেছিল, কেমন ভালবাসতো- এরকম আরও অনেক কথা। সুব্রত ছোট ছোট করে বলতে গিয়েও ক্লান্তবোধ করে। লম্বা লম্বা হাই ওঠে তার। পুরো ঘরটা তার কাছে বড় অচেনা ঠেকে। কিন্তু মা বিছানায় এলে সুব্রত বাচ্চা ছেলের মতো তার মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দেয়। মা অমলাও পরম স্নেহ আদরে ছেলেকে টেনে নেয়। তখন তার আর ঘরকে অচেনা মনে হয় না। সুব্রত ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে। মা আর তাকে একথা সেকথা দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করে না। ঘুমাক, আরাম করে ঘুমাক ছেলেটা তার। কতোদিন সে মায়ের বুকে মাথা দেয় নি, মায়ের কোলে ঘুমায় নি। সে নিজেও কতদিন কোলশূন্য করে রেখেছিল, ছেলেটা দু’দিন বাদেই আবারও কোল শূন্য হবে- ভাবতেই মায়ের বুকটাতে ধ্বক করে ওঠে। মহাজন, ভালোমানুষ লোকটা সাথেই এসেছিল, যাওয়ার সময় বলে গেছে, যে কয়দিন থাকতে ইচ্ছে হয় থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে যায় যেন।

মুহূর্তে মহাজন লোকটার কথা বুকে ঢোল পেটানোর শব্দে বাজলেও এটা ভেবে মা স্বস্তিবোধ করে যে, ছেলে তো তার আর হারিয়ে যাচ্ছে না। ছেলে বড় হয়েছে বেশ। মাসের শেষে দুই-একদিনের জন্য হলেও আবার ফিরে ফিরে আসবে তার কোলে…।

চলতি সংখ্যা