লেখক প্যানেল
মোহনা হাসান প্রেমা

মোহনা হাসান প্রেমা’র ৫টি কবিতা

এক.
শুনলাম তোমার নাকি জ্বর উঠছে,
জিহ্বাতে ফোসকা পড়ছে,
বুকের বাম পিঞ্জরে নাকি বিদনা উঠছে?
খুব ইচ্ছা করতাছে
তোমারে একটু দেশী মুরগীর সাদা ঝোল রাইন্দা পাঠাই,
নাইলে ধরো কাটা মশলায় গরুর গোশত্
সাথে কিছুডা গরম মাড়গালা ভাত ।
কিন্তু হায়!
এই খাওন ভর্তি টোল পড়া টিফিন ক্যারিয়ারডা
আমি ক্যামনে পৌঁছাবো
তোমার ঐ নাম নাজানা ঠিকানায়?
এই মরার পিরীতি আমারে হাত পা বাইন্ধা সাগরে ফালাইছে,
আমি যে সাঁতরাইতেও জানি না।
তবু ক্যান তোমারে
আমার নিজ হাতে
দুই নলা গরম ভাত খাওয়াইতে ইচ্ছা করে?
বিশ্বাস করো-
এই আফসোস খান ছাড়া
এখন আমার কোন কিছুই আর বাঁইচা নাই।
একটুস খানি কাছে আইসা বসো-
গরম ভাতে তোমারে না হয়
একটু আফসোস মাখাই খাওয়াই দেই

দুই.
ডাক হরকরা আজ ও
তোমার পত্র আনে নাই
সেই কবে কোন অমাবস্যার রাইতে বাড়ি ছাড়লা
সেই থেইকা আজ অব্দি তোমার খবর পাইলাম না...
আব্বারে জিগাইলাম-
আব্বা, তুমি যখন গঞ্জে যাইতা, মাকে কি রোজ রোজ পত্র পাঠাইতা?
আব্বা কইলো-
দূরো ও পাগলী
পত্র দিলেই কি মহব্বত বাড়ে?
বাড়ে না….
মহব্বত বাড়ে বিশ্বাসে, আশ্বাসে,অপেক্ষায়..
তুমি যদি জাইনা ফেলো সে কেমন আছে,
তাইলে কোন কিছুরই আর জানার বাকি থাকবো না...

তিন.
থাক না হয় সেকথা -
কে ভালোবেসেছিলো
আর কে কম ,
কে কথা রেখেছিলো আর কে রাখেনি তেমন..
২৭ বছর পর যখন দেখা হবে আবার
তখন না হয় সেরে নেবো বাকিটা আলাপ।
এখন তুমি আমাকে ভাবো, শুধুই আমাকে...
আমার দিকে একটুখানি তাকাও
খুব যত্ন করে এবার আমার হাতটা ধরো,
হাতটা ধরে বলো -
বৃষ্টি নামবে,বাড়ি চলো।

চার.
তা হ্যাঁ রে,গল্পটা কতদূর এগোলো?
দেখা হয়েছিল আর?
-হুম,তার বেশ কিছু দিন বাদেই ।
তারপর….
-তারপর আর কি
এক বুক দীর্ঘশ্বাস,
চোখ নামিয়ে, সামনের চোখ দু'খানির সত্যি মিথ্যে অনুমানে বেশখানিকটা সময় বোনা...
কাটা চামচ আর চিনেমাটির অযথা কিছু শব্দ,
আর দু'প্রান্তেই বেশ খানিকটা অস্থিরতা...
উঠে যাবার তাড়া?
-নাহ্ অপেক্ষার,
উঠে যাবার আগেই পথটা আটকে কেউ বলুক-
আর কিছুক্ষণ কি থাকা যায় না?
একে অপরের অপক্ষা বড় খারাপ জিনিস জানিস তো?
শেষমেষ গল্পটাই না আবার অসমাপ্ত রয়ে যায়।
আচ্ছা তোরা কি পারিস না কেউ একজন একটু এগিয়ে যেতে?
-পারি হয়তো,
ধরো এগিয়ে গেলাম
বেশ খানিকটা পথ
তারপর, একটা সময় পিছন ফিরে দেখি
আমার ছায়াটুকু ছাড়া ফিরে পাবার মত
আর কিছুই অবশিষ্ট নেই...
তাহলে গল্পটার কি হবে?
-ঝড়টা থামুক,বাকিটা না হয় কাল বলি...

পাঁচ.
তোমাকে রোজ "ভালোবাসি না " বলা মেয়েটা
তোমাকে অনেক ভালোবাসে,
তোমাকে রোজ "মনে পড়ে না "বলা মেয়েটা
তোমায় রোজ মনে করে...
তোমাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকা মেয়েটা
অগোচরে শুধু তোমাকেই খোঁজে
তোমাকে রোজ "অপেক্ষা করো না " বলা মেয়েটা
খুউব করে চাই -
তুমি শুধু তার অপেক্ষাতেই থাকো ।
"তোমাকে ছাড়া যে দিব্যি চালিয়ে নেবে"
গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে থাকা মেয়েটা -
বিশ্বাস করো, তোমাকে ছাড়া সে
রাস্তাটা অব্দি পার হতে পারে না...
এ ভালোবাসাটা কিসে মাপবে শুনি?
ভালোবেসেই অনন্তকাল কাটিয়ে দেবে হয়তো-
কিন্তু তুমি জানবে-
স্বার্থপর একরোখা অহংকারী মেয়েটা
তোমার কথা ভেবেও দেখেনি কখনো

মোহনা হাসান প্রেমা
মোহনা হাসান প্রেমা সমসাময়িক বাংলা কবিতার এক উজ্জ্বল কণ্ঠস্বর। জন্মেছেন বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায়, আর বর্তমানে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকা শহরে। শহরের কোলাহলের মাঝেও তার কবিতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে একান্ত ব্যক্তিগত অনুভব, হৃদয়ের দ্বন্দ্ব এবং সময়ের সমাজবাস্তবতা। কবিতার প্রতি তার গভীর অনুরাগ ও ভাষার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন দুইটি কাব্যগ্রন্থ। তার দুইটি কাব্যগ্রন্থ— আমার কিছু বলার ছিল এবং আমি এখন বদলে গেছি
বার পড়া হয়েছে
প্রকাশিত :
জুলাই ১, ২০২৫
শেয়ার :
পয়স্তিতে যারা লিখেছেননির্দেশিকাশর্তাবলী
১০ দিনে জনপ্রিয় লেখক
magnifiercrossmenu