সে ঘটনার পাঁচ বছর পর

এক বিকেলে নির্জনেবাস একজন লোক বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখতেছিল। আকাশ মেঘলা ছিল কিন্তু বৃষ্টি ছিল না। কেমন জানি একটা থমথমে পরিবেশ অনুভূত হচ্ছিল তার কাছে। কোথায় যেনো বৃষ্টি হচ্ছে, দূর থেকে হিমেল হাওয়া আসতেছিল। যেনো  ফেব্রুয়ারি মাসের তুমল শীতে কাঁপুনি দিয়ে যাচ্ছিল। বারান্দার আবছায়া আলো আধারের মধ্যে হিমেল তাই  শীতের পোশাক আনার জন্য ঘরে পা বাড়াচ্ছিল। ঠিক তখনি একটা কুকুর তার পায়ের ধাক্কা খেয়ে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু কুকুরের রাগ বা ক্ষোভ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এটি  ছিল অসহায়। দুটি পা ভাঙা ছিল এর। সে কুকুরটাকে তাড়ালো না বরং এর খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে দিল। সে থেকে কুকুরটি বারান্দায় থাকে। অধিকাংশ সময় শুয়ে থাকে এবং পরদিন থেকে তার পাশে নতুন আরেকটি কুকুর আসে এবং সারাদিন পাশেই থাকে। দেখে মনে হয় এরা পূর্বপরিচিত। মানব সমাজের মতো কুকুর সমাজে বিবাহ প্রথার প্রচলন থাকলে এরা স্বামী স্ত্রী হতো বা এদের একটি সংসার থাকতো যেখানে এদের একটি ছেলে সন্তানও থাকতে পারতো। এদের আচরণ এমনি! সাংসারিক মায়া মমতা ভালোবাসা ভর করেছে এদের উপর। খাবার দিলে এরা ভাগাভাগি করে খায়, ভাগাভাগি করে একটি আরেকটির উপর ঘুমায়, ভাগাভাগি করে ঝগড়া করে।

হিমেল গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করতে থাকে যে অসুস্থ কুকুরটি দিনদিন যতই সুস্থ হচ্ছে ততই এরা ঝগড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুব মনোমালিন্যও হয় এদের। দুটি কুকুর ঝগড়ার পর আলাদাভাবে শোয়। যতক্ষণ না এদের ভালো সম্পর্ক থাকে তার চেয়ে বেশি সময় ধরে এরা ঝগড়া করে। কুকুরদুটির ঝগড়ার কারণে হিমেল এক সপ্তাহ ধরে বিকেলে ঘুমাতে পারে না। কিন্তু সেদিন দুপুরে কুকুরদুটির মধ্যে কোনরকম চেঁচামেচি বা চিৎকারের আওয়াজ হয়নি। তাই দেখে  হিমেল অবাক হয়ে দরজা খুলে বাহিরে আসলো। এবং  দেখলো যে তাদের বারান্দায় শুধু একটি পা ভাঙা কুকুর কার জন্য যেনো মনমরা হয়ে বসে আছে। হিমেল ধপাস করে মেঝেতে বসে পরে। মানুষ ও কুকুরের চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকলো। 

© জুয়েল মিয়াজি।

চলতি সংখ্যা