পরান বাউল

একাদশী তিথীতে চাঁদ চকোরীর মিলন সাঙ্গ করে দোল পূর্ণিমার ভরাট চন্দ্র বাঁশ বাগানের ফাঁক গলে যখন উদয় হলো তখন কেটে গেছে রাতের দ্বিপ্রহর ।

নিশিতন্দ্রা অধোঃজাগরণে পরান। দুচোখে তার ধর্মাবেশ ওযু করে তাহাজ্জুদ আদায় করে নেয়। তার কাছে পৃথিবীর বলয়, মানুষের আচরণ, হাজার ভাষাভাষী আর নানান রঙের মানুষ নিয়ে কল্পনার এক বিশাল জগৎ চরাচর।

সদা চিন্তা খেলে যায় পরানের মস্তিষ্কে একই ঈশ্বরের দুনিয়ায় এত ধর্ম, এত উপাসনা, এত দলমতের ভিন্নতা; কেনো?

কখনো সে তাবলীগ জামায়াতে যায় ৪০ দিন ব্যায় করে, কখনো বা আটরশি, ফুরফুরা, চরমোনায়। যখন যেখানে যে যেভাবে পরানকে দাওয়াত দিয়েছে সেটাই পরান হাসিমুখে কবুল করে তার সাথে শরিক হয়েছে, কাউকে না করেনি।

পরান লক্ষ্য করেছে সবাই তাকে নামাজের দিকেই আহ্বান করে, পিতা মাতার খেদমত করতে বলে, রোজা কালাম করতে বলে। কিন্তু পরানের মন মানে না তার কাছে ইসলাম ধর্ম মানে শুধু নামাজ রোজায় সীমাবদ্ধ নয়; আরও বেশি কিছু। কেউ তো বলেনা হাটার সময় খেয়াল রেখো পায়ের নিচে পিপড়া পড়ে যেনো মারা না যায়। সুদ-ঘুষ খেয়োনা, দৃষ্টি সংযত করো, নারীকে সন্মান দাও, খোদাপ্রাপ্তির ধ্যান করো।

সবাই আছে তার দলের দলীয় কর্ম নিয়ে সাংগঠনিক রূপে তাই পরান গত ৫ বছর ঘরবন্দি থেকে ইবাদত করেছে দলের কাছে যায়নি। যার কাছেই গেছে সে নিজেদের সেরা বলে তবলা বাজিয়ে দেয়।

পরানের চুল, দাড়ি বড় হয়ে রবীন্দ্রনাথ হওয়ার উপক্রম। পাড়ার ছেলেরা তার নাম দিয়েছে পরান বাউল। কেউ কেউ এসে খিস্তি খেওড় দিয়ে যায়- এতকাল নামাজ কালাম পড়ে শেষমেশ তুই নাড়ার ফকিরের দলে যোগ দিলি?

মনের ক্ষোভে দোল পূর্ণিমার রাতে পরান লালন শাহের মাজারে গিয়ে ফকির খুঁজতে থাকে। অবশেষে একজনের সন্ধান পেয়ে বেশকিছু দিন বাদে পরান তার আখড়া বাড়িতে হাজির হলো এই ভেবে- সবই যখন দেখলাম তখন বাউলদের মতবাদ দেখতে আর দোষ কীসের ।

ফকিরের নিকট আসা যাওয়া পরানের বেড়ে গেলো। ফকির তাকে দীক্ষা প্রদান শুরু করলেন যতদুর জানা যায় শেষবার যখন পরানের নিকট জানতে চেয়েছিলাম তুমি কি কিছু পেলে?

পরান বলেছিল- যা অপরের মাঝে খুঁজে ছিলাম তা তাদের মাঝে ছিলো না আর তাদের মাঝে যাহা শুনে ছিলাম এখানে তার ব্যাখ্যা পেলাম।

পরানের চুল এখন পিছনে ঝুটি করে বাঁধা। কিছু জিগ্যেস করলেই এক লাইন করে গান শুনিয়ে দেয়।

পরান বাউল সাইকেল নিয়ে এ পথেই ফিরবে আমিও ফিরব, তুমিও ফিরবে সামনে পুকুর তারপর খাল তারপর ধানের মাঠ, ছোট্ট একটা নদী, সেখানে কলসী কাধে রমণীর বাচ্চাটি কাঁদছে, মসজিদে আযান হচ্ছে…

© মাহমূদুল হাসান

চলতি সংখ্যা