মাহির তাজওয়ার
মাহির তাজওয়ার

ছায়ামানবী

আমি ঢাকার পঙ্গুতে। এখন অবশ্য এটাকে কেউ পঙ্গু বলে না। বলে নিটোর। The National Institute of Traumatology & Orthopaedic Rehabilitation (NITOR). অনিতা এখানে এভাবে হুট করে চলে আসবে ভাবিনি। তবে একথা সত্য যে, ও আমাকে হঠাৎ হঠাৎ চমকে দেয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় রকমের চমকে গেছিলাম তখন, যখন দেখলাম আমার ডান পা কাঁটা হয়েছে। এক্সিডেন্ট যে বড় রকমের হয়েছিল এতে আর আমার কোন সন্দেহ রইলো না। যদি অনিতার কথা শুনতাম তবে আর এরকম হত না। কিন্তু ও কি ভাবে যে এত সব বুঝতে পারে এটা আমার অজানা। তবে আমার একটু অন্য রকম লাগলো। অনিতা বোধ হয় আর আমাকে ভালোবাসবে না। একটা পঙ্গুকে কেউই ভালোবাসতে চায় না। সকলেই করুণা করতে চায়। এক পায়ের এই মানুষটাকে সারাটি জীবন সকলের করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। ভাবাই যায় না।  ভাবতে ভাবতে ঘুম জড়িয়ে এলো চোখে। একটু ঘুমুতেই আবারো অনিতা এলো। এবার আমাকে শাষণ করলো। বললো, এসব কি ভাবছো কায়সার? কেউ তোমাকে করুণা করবে না। সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। আরও কি সব যেন বলল ঘুম ভাঙতেই ভুলে গেছি।

বলতে গেলে অনিতা ছিল আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। একদিন দুপুরে অনিতা আমাকে সাবধান করেছিল। বলেছিল, কায়সার তুমি ঢাকায় যাচ্ছো। কিন্তু যেও না। আমি নির্বিঘ্নে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন? বোধ হয় একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেই গাড়িতে তুমিও থাকবে। আমি অবাক হয়েছিলাম। দুর্ঘটনা! একটু মৃদু হাসলাম। আমি জানি এটা যে কারও হতে পারে তাই বলে কি আর কাজ থামিয়ে রাখা যায়? শুনিনি অনিতার কথা। যথারিতি রওনা দিলাম। ঢাকায় যাওয়ার পথে খুব অনিতাকে মিস করছিলাম। ওকে বার বার বলেছিলাম, চল দুজনেই যায়। কিন্তু ও রাজি হল না।

চলন্ত বাসটাকে খুব উপভোগ করছিলাম। বাইরের সবুজ মাঠ, গাছপালা, সবকিছু চমৎকার। খুব ভলো লাগলো আমার। কেবল মাগুরা ছেড়েছি। একটা মাঠের মধ্যে। হঠাৎ ব্রেক। সজোরে একটা শব্দ কানে এলো। তার পর আর কিছু মনে নেই আমার। তাকিয়ে দেখি মাথার উপর স্ব-স্ব শব্দ করে পাখা ঘুরছে। আশে পাশে আমার মত অনেকেই শুয়ে। কারো হাত ভাঙ্গা, কারো পা ভাঙ্গা, কারো মাথা কাটা ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝতে বাকি রইলো না আমি হাসপাতালে। ডান দিকে চোখ ফেরাতেই দেখি অনিতা। এখানে ওকে দেখে অবাক হলাম। ভীষন অবাক হলাম। অনিতা আমার শিউরে দাড়িয়ে কাঁদছে। হঠাৎ কান্না থামিয়ে বলল- কি, শুনলে না তো আমার কথা? দেখলে তো কি হল? এমন অসুস্থতার মধ্যেও যেন আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বললাম আচ্ছা অনিতা আমি এখন কোথায়? ও আমার কথার কোন উত্তর করল না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। যেন একটা মুর্তি। এবার ও আমার বিছানায় এসে বসল।

একরকম মোহ বলা যায়। এটা সর্বদা আমার মাথায় বিদ্যুতের মত কাজ করে। যখনই নিজেকে নিয়ে ভেবেছি তখনই আমার জীবন আরও বিষন্ন হয়েছে। ভাবনার রশ্মি ধরে হারিয়ে গেছি। শুধু হারিয়েই গেছি। নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে এখন আমি ক্লান্ত। আর যখনই শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবি তখনই চলে আসে অনিতা। আমি জানি অনিতা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। আর তাই আমি দুশ্চিন্তাই পড়লেই ও আমার সামনে এসে হাজির হয়। অনিতাকে আমি কখনোই ছুয়ে দেখিনি। একবার চেয়েছিলাম, ও বারণ করেছিল। তাই ছোয়া হয়নি। তবে আদৌ হবে কিনা জানি না। একথা সত্য যে ও এখন আমার থেকে অনেক দুরে দুরে থাকতে চায়। মাঝে মাঝে মনে হয় অনিতার প্রতি দুর্বলতা আমার কোন কালেই ছিল না। আজও নেই। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় একমাত্র অনিতাই আমার জীবনের সব। ওকে ছাড়া আমার চলবেই না। আমি ওকে বিয়ে করতে চায়। আমার মনে আছে বেশ কিছুদিন আগেও ও আমার কাছে এসেছিল।

রাত তখন বারোটা সোয়া বারোটা হবে। আমি কি একটা যেন করছিলাম। হঠাৎ জানালায় খট করে একটা আওয়াজ হল। খুলে দেখি অনিতা। এত রাতে একা একটা মেয়ে! চমকে উঠলাম। অনিতাকে এত রাতে দেখতে পাবো ভাবিনি। মনের ভেতর থেকে আপনা আপনিই বিস্ময়টি বেরিয়ে এল, এত রাতে! ও বলল তোমায় দেখতে মন চাইলো। গম্ভির মুখে বললাম, বেশ তো, দেখা হয়েছে? এবার যাও। ও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। মুখটা কেমন ফ্যাকাশে করে বলল, তাড়িয়ে দিচ্ছ? তারপর আরও কিছুক্ষণ থেমে রইলো। ওর নিশ্বাসের গরম হাওয়া আমার গালে এসে পড়ল। হঠাৎ বলে উঠল, চল এক জায়গা থেকে ঘুরে আসি।  আমি তো অবাক! এত রাতে? তারপর কি একটা যেন ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। পাশাপাশি হাটছি। আমার বাড়ির পাশেই বিশাল এক আম বাগান। তার পাশেই কবর স্থান। ও আমাকে তার ভিতর দিয়ে নিয়ে চলল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এর ভেতর দিয়ে অনিতা আমাকে কোথাই নিয়ে যাচ্ছে?

মধ্য রাত। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। পরিস্কার জোৎস্নার আলো। এই জোৎস্নার আলো আমার কাছে সোনালী বলে মনে হল। যেন আকাশের গা থেকে স্বর্ণ খুলে খুলে পড়ছে। জোৎস্নার আলোয় অনিতাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। যেন স্বর্ণ কুমারী। আমি অনিতাকে বললাম, তোমাকে খুব ছুতে ইচ্ছে করছে। ও খিল খিল শব্দে হেসে উঠলো। যেন তরঙ্গের শব্দ। বাগান পেরিয়েই আমরা নদীর তীরে এসে পৌছালাম। ছোট্ট নদী। পরিস্কার নীল পানিতে আর একটা চাঁদ যেন নেমে এসেছে। ঢেউ এর সাথে চাঁদটাও হেলে দুলে নেচে চলেছে। সেই সাথে নেচে চলেছে প্রেম পিপাসায় তৃষ্ণার্ত, অস্থির দুটি হৃদয়। নদীর পানিতে একটি চমৎকার স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছিল। সেই স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে বসে আছি আমরা দুজন। হঠাৎ করেই মেঘ জমলো আকাশে। নিভে এলো আলো। বাতাস উঠলো। বাতাসের তালে তালে আমার মনটাও নেচে উঠতে চাইলো। উঠে পড়লাম তীর থেকে। আমরা দুজনে হাটছি। অনিতা বলল, চলো বৃষ্টি গায়ে মেখে খালি পায়ে হাটি। তখনও বৃষ্টি নামেনি। আমি বললাম বৃষ্টি কোথায়? কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নামল। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমরা দুজনে হেটে চলেছি। আবারও অনিতাকে আমার ছুতে ইচ্ছে হল। ইচ্ছেটা মনেই দমিয়ে রাখলাম। তবে এ কথা সত্যি যে এত রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভিষন ভালো লাগছে। হঠাৎ করেই মাথাটা ঘুরে উঠলো।

পরদিন সকালে ভীষন জ্বর । উঠতেই পারছি না। একটুখানি চোখ বুজতেই দেখি অনিতা। এসেই আমার কপালে হাত রাখলো। আমিও ওর হাতে হাত রাখলাম। বলল, তুমি বিকেলের দিকে সুস্থ হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি বিকেলের দিকে একদম সুস্থ হয়ে গেলাম। অসাধারণ একটা মেয়ে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে মেয়েটার মধ্যে একটা ঐশ্বরিক ক্ষমতা রয়েছে। সাহসও আছে বটে।

অনেক দিন হল অনিতার খবর নেই। ওকে ভুলতে পারি না। ভুলবো কি করে আমি আমার জীবনের সেরা মূহুর্তগুলো পার করেছি অনিতার সাথে। বাবা মা ভাবলেন আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। অনিতাকে ভুলে যাবো। বাবা মা না জানলেও আমি জানি অনিতাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কোন দিনই সম্ভব নয়। তাই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলাম না। কিছুতেই না। কারন আমার একটা বিশ্বাস ছিল অনিতা আসবে। আবার আসবে। কিন্তু শেষমেষ রাজি হতেই হল। বাবা একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। মেয়েটা আমাকে অতি অল্প দিনেই আপন করে নিল। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম আচ্ছা আমি যদি তোমাকে উর্মির পরিবর্তে অনিতা বলে ডাকি তুমি কি রাগ করবে? ওর একটা মিষ্টি হাসিই আমাকে হ্যা সূচক বাক্যটি শুনিয়ে দিল। উর্মি আমার প্রয়োজন অপ্রয়োজন গুলো খুব ভালো বুঝতো। ফুলের মত মেয়ে। আমিও ওকে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করলাম। আর ভুলতে শুরু করলাম অনিতাকে।

বাবা তার বন্ধুকে বলে আমার জন্য একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিলেন। কিন্তু চাকরিটা অনেক দুরে। চট্টগ্রামের সমুদ্রের তীরবর্তি ছোট্ট একটা গ্রামে। বাবা উর্মিকেও আমার সাথে পাঠালেন। উর্মিকে নিয়েই আমি চুয়াডাঙ্গা থেকে চট্টগ্রামে রওনা দিলাম। প্রথম প্রথম ভালোই ছিলাম। ভালোই কাটলো দিন। উর্মিকে নিয়ে সমুদ্রের তীরে বেশ কয়েকটা সন্ধ্যা কাটালাম। বড় বড় পাহাড় ঘুরে এলাম। প্রথম প্রথম ও পাহাড়ে উঠতে ভয় পেত। আমি ওকে হাত ধরে উঠাতাম। ও খুশি হত। ওর খুশিতে আমিও খুশি হতাম। তারপর হঠাৎ একদিন অনিতা এসে হাজির। তখনও অনেক রাত। উর্মি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমার ঘুম আসছিল না। অনিতাকে দেখে খুব ভালো লাগলো। আমিই ওকে বললাম চল ঘুরে আসি। আমি উর্মিকে একলা রেখেই বাড়ি থেকে অনিতাকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম সেদিন। অনিতাকে নিয়ে পাহাড়ে উঠলাম। সেদিনও আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। জোৎস্না ছিল। ওকে নিয়ে সমুদ্রের তীরে গেলাম। বালির উপর নাচানাচি করলাম। সেই মধ্য রাতেও সমুদ্রের পানিতে গোসল করলাম দুজনে। ভিজে গায়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। ফেরার পথে আবারও হঠাৎ করে মাথা ঘুরে উঠলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।

চোখ খুলে তাকাতেই দেখি আমি হাসপাতালে। আমার  মাথার কাছে বসে উর্মি। ওর চোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরছে। তার দু এক ফোটা আমার কপালে এসে পড়লো। তখনো ওর হাত আমার ঘন চুলে গাথানো। ঐ হাতকে কেন জানি আমার কাছে জলন্ত আগুন বলে মনে হল। কেউ যেন আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। মাথাটা জ্বলে যাচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে শুরু হল এক ভীষণ যন্ত্রনা। উর্মির চোখ, মুখ, হাত পানে তাকাতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মনে হল ওর সামনে থাকলে আমি মরে যাবো।  আমি চোখ বুজলাম। অনিতা আবার এসে ধরা দিল আমার চোখে। বলল তুমি পারলে কায়সার, আমার স্থানে উর্মিকে বসাতে? তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে? যদি সত্যিই বেসে থাকো তাহলে উর্মিকে সরিয়ে দাও। চিরতরে সরিয়ে দাও। মেরে ফেল ওকে। হত্যা কর।

আমি সত্যি সত্যিই অনিতাকে অনেক ভালোবাসি। আর তাই এক গভীর রাতে সুযোগ বুঝেই উর্মির গলায় ওর ওড়না পেঁচিয়ে ধরলাম। কষে একটা টান দিলাম। উর্মি চিৎকার করে উঠতে চাইলো। আমি ওর গলার মধ্যে কাপড়ের টুকরো ঢুকিয়ে দিলাম। আর চিৎকার করতে পারলো না। শুধু এলো পাথাড়ি হাত পা ছড়াতে লাগলো। আমি ওর হাত দুটো বাঁধলাম। পা বাঁধলাম! গলা দিয়ে বার কয়েক কুঁই কুঁই শব্দ বের হল। ক্রমশ ওর সাদা মুখটা যেন রক্তবর্ণ হয়ে উঠলো। অনিতা অবশ্য আমার সাথেই ছিল। ও আমাকে সাহায্য করছিল। হাসছিল। ভীষন জোরে জোরে হাসছিল। ওর হাসি আমাকে আরও জাগিয়ে তুলল। আরও অনুপ্রাণিত করল। খুব ভালো লাগছিল আমার। আমি উর্মিকে আরও শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই উর্মি অসাঢ় হয়ে পড়ল। অনিতা আমাকে সাহায্য না করলে হয়তো উর্মিকে মারা আমার পক্ষে এত সহজ হত না। আমি বুদ্ধি করে উর্মিকে ঘরের ভেতরে রেখে একটা বড় তালা লাগিয়ে দিলাম। সেদিনও ভরা জোৎস্না। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। কেউ দেখলো না। কেউ জানলো না। কেউ শুনলো না। মাঝ রাতেই চিটাগাং ছাড়লাম। চুয়াডাঙ্গায় না গিয়ে ঝিনাইদহে নেমে পড়লাম।  এখানেও শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। ভাবলাম ঢাকা যাবো। হঠাত কেন জানি ঢাকায় যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে হল। অনিতাকে সঙ্গে নিতে চাইলাম ও রাজি হল না। তারপর যাওয়ার পথে মাগুরায় গাড়ি এক্সিডেন্ট। পা হারালাম। এখন আমি খোড়া। ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাটছি।

চারিদিকটা কেমন যেন থম থমে ভাব। গম্ভির। আমি কেন জানি ক্রমশ পাগল হয়ে যাচ্ছি। সবকিছু কেমন উল্টা পাল্টা হয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ হঠাৎ মাথা ব্যাথা করে। চক্কর দেয়। যখন তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আর জ্ঞান ফিরলেই অনিতাকে খুঁজি। সেদিনের পর থেকেই অনিতা আমার সাথে আর দেখা করেনি। উধাও। তবে মাঝে মাঝে স্বপ্নে এসে দেখা দিয়ে চলে যায়। ক্র্যাচে ভর দিয়ে খোঁড়াতে থাকি। খুঁড়িয়ে চলতে আমার ভাল লাগেনা। মনটা ভীষণ বিষণ্ন। অনিতাকে আমি দেখিনা অনেকদিন হল।  উর্মির কথা মনে পড়ে যায় যখন তখন। মেয়েটাকে আমি হত্যা করেছি। তীব্র অপরাধ বোধ আমার মধ্যে কাজ করে। আমি জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলি। দ্রুত হাটার চেষ্টা করি। দেখি দুরে কয়েকটা পুলিশের জটলা। পুলিশ দেখে ভয়ে আমার বুকটা কেঁপে ওঠে। আমি অস্থির হয়ে উঠি। হঠাৎ অনিতা আমার কাছে চলে আসে। আমাকে সাহস দেয়। আমি সাহসী হয়ে উঠি। ধীরে ধীরে জটলার দিকে এগিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে কিছুই বলে না। আমি দ্রুত সামনে এগুতে থাকি। অনিতা হাসে। দেখলে কায়সার পুলিশ তোমাকে কিছুই বলল না। মুলত পুলিশ আমাকে চিনতে পারেনি। চিনতে পারলে অবশ্যয় ধরে নিয়ে যেত। আমি জানি আমাকে ধরতে চিরুনি অভিজান চলছে।

অনিতা আমার সাথে সাথে হাটে। আমরা একটা রেল লাইন ধরে হেটে চলেছি। অনিতা আমাকে বলে, তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো না কায়সার? আমি বোঝাতে পারব না অনিতাকে আমি কতটা ভালবাসি। আমি অনিতার দিকে তাকিয়ে বোকার মত হাসি। অনিতাকে বলি, প্রমাণ চাও অনিতা? অনিতা বলে হ্যাঁ চাই। বল কি করতে হবে? অনিতা আবার প্রশ্ন করে, সবসময়ের জন্য আমাকে তুমি কাছে পেতে চাও না কায়সার? আমি বললাম হুম খুব চাই। অনিতা বলল, এখন ট্রেন আসবে। তুমি লাইনের উপর দাড়িয়ে থাকবে। আমি বললাম এ আর এমন কি অনিতা? সত্যি সত্যিই কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন ছুটে এলো দ্রুত গতিতে। আমি রেল লাইনের উপর স্থীর দাড়িয়ে রইলাম। দেখলাম অনিতা আবারও হাসছে। খুব জোরে জোরে হাসছে। ট্রেন বার বার হুইসেল দিতে দিতে আমার দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। আমি ক্র্যাচ ফেলে একপায়ে দাড়িয়ে। ট্রেন আমার খুব কাছে। আমার দৃষ্টি অনিতার দিকে। আমি ওর হাসি দেখছি। ও হেসেই চলেছে। হাহা হিহি হেহে শব্দে হাসি। ভয়ঙ্কর হাসি। আমি কাঁপছি। আমার চারিদিকটা কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।

চলতি সংখ্যা