কাল মার্ক্স
কহন কুদ্দুস
বার পড়া হয়েছে
প্রকাশিত :
মে ২, ২০২৪
শেয়ার :
পয়স্তিতে যারা লিখেছেননির্দেশিকাশর্তাবলী
কহন কুদ্দুস

বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ও জীবনাদর্শের প্রতীক: কাল মার্ক্স

পৃথিবীর সমগ্র শোষিত, বঞ্চিত, দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হয়ে সমস্ত জীবন যিনি ছুটেছেন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা করে গেছেন। মানবের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যিনি জীবনের স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন-যাপন ত্যাগ করে ধনী ও গরিবের সমতার জন্য কাজ করেছেন। তার ভাগ্যের কি চরম পরিহাস। সেই মানুষটিকে সারাটা জীবনই কাটাতে হয়েছে অসহনীয় দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে।

ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করে কাল মার্ক্স লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিশাল পাঠ কক্ষে এসে প্রতিদিন বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকতেন। যখন দিন শেষে সবাই পাঠ কক্ষ থেকে বিদায় নিয়েছে, তিনি সবার শেষে বেরিয়ে ধীর পদক্ষেপে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়িতে যেতেন। দরজার কড়া নাড়াতেই তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী জেনি ভিতর থেকে দরজা খুলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে নিমগ্ন মানুষটিকে দেখে ছেলে মেয়েরা আনন্দে চিৎকার করে উঠতেন । মুহূর্তে গভীর আত্মমগ্ন মানুষটি সম্পূর্ণ পাল্টে যেতেন। হাসি খুশি আমোদ আহ্লাদে মেতে উঠতেন স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে। তিনি সম্পূর্ণ শিশুর মত আচরণ করতেন। জীবনের সব কিছুকেই খুব সহজ ভাবে নিতেন।

সকালে বাড়ি থেকে বাহির হয়ে সারাদিন পর তিনি সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতেন। কখনো বাড়িতে এসে দেখে সবার মন বিষাদক্লিষ্ট । মানুষটির বুঝতে অসুবিধা হয় না। বুঝতেন বাড়িতে কোন খাবার নেই। আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন। পরিচিতজনদের কাছে ধরনা দিতে হয়েছে। কখনো ফল হয়েছে কখনো হয়নি। না হলে কোন কোন দিন খালি হাতে বাড়ি, কোন না কোন জিনিস নিয়ে তা আবার বন্ধক রেখে সেই অর্থ দিয়ে খাবার কিনে আনতেন। ঘরে ফিরতেই সবকিছু ভুলে যেতেন। তখন হাসি-খুশি প্রাণোজ্জ্বল মানুষটির গুরু গাম্ভীর্য পাণ্ডিত্যের চিহ্নমাত্র তার চেহারায় খুঁজে পাওয়া যেত না। এই অদ্ভুত মানুষটি যিনি সারাজীবন রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজ নীতি, অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন। ভঙ্গুর পৃথিবীকে উত্তরণ ঘটাতে তাঁর চেষ্টার কমতি ছিল না।

শৈশব কাল থেকেই কাল মার্ক্স অন্য সব শিশুদের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। ধীর শান্ত প্রকৃতির, লক্ষণীয় তাঁর চরিত্রে এক অনমনীয় দৃঢ়তা । অন্যায়ের কাছে আপোষহীন ব্যক্তিত্ব। সে সময়ে হেগেল ছিলেন জার্মানির শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, তাঁর দার্শনিক মতবাদ দ্বারা যুব সমাজ গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। মার্ক্স হেগেলের দার্শনিক চিন্তার দ্বারা আকৃষ্ট হয়। সে কারণে জার্মানির যুব সমাজ গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন দেখেছিলো, মার্ক্স তা সর্বান্তঃকরণে সমর্থ করেন। তদসময়ে অল্প দিনের মধ্যে মার্ক্স বনে আসেন। সেখানে একজন তরুণ/যুবকদের সাথে পরিচয় হয়। তারা সকলেই হেগেলের মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ওদের সাথে বৈপ্লবিক কাজ কর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন মার্ক্স। নিজের ব্যক্তিত্ব প্রখর বাস্তবতা অসাধারণ প্রতিভার কারণে খুব অল্প দিনেই যুবকদের নেতা নির্বাচিত হলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে ঐ যুব সমাজ মুগ্ধ হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সেই যুগের শ্রেষ্ঠ একজন দার্শনিক মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই প্রগাঢ় প্রজ্ঞার সাথে মিশে তাঁর তীক্ষ্ণ জীবনবোধ তরুণ/যুব সমাজকে আকৃষ্ট করেন। যদি রুশো, ভলতেয়ার, হাইনে, হেগেলকে একত্রিত করা হয়, সেখানে একটি নামই প্রতিদ্ধনীত হয়, যিনি হচ্ছেন কাল মার্ক্স।

তনমধ্যে সমগ্র পৃথিবীর ধনতান্ত্রী শোষকেরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে । তা থেকে মার্ক্স শোষিত বঞ্চিত মানুষকে বাঁচানোর জন্য অনুভব করলেন মত প্রকাশের জন্য একটি পত্রিকা। তিনি ও তরুণ/ যুব সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রকাশ করলেন ‘রেনিস গেজেট’ নামকরণে একটি পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন কাল মার্কস । শ্রমিকদের অধিকার সম্বন্ধে সকলকে সচেতন করার জন্য একের পর এক প্রবন্ধ লিখতে লাগলেন। কয়েক সংখ্যা প্রকাশ হতেই শাসক শ্রেণীর রোষানলে পরলেন। অল্প দিনের মধ্যেই সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করেন এবং মার্কসকে জার্মান ত্যাগ করতে আদেশ জারি করেন। মার্ক্স তার স্ত্রী জেনিকে নিয়ে জার্মান ত্যাগ করে ফ্রান্সে আসেন। সেখানে এসেও কিছু তরুণের সাথে পরিচয় হয়। এদের মধ্যে ছিলেন প্রাওধন, হেনরিক, পিয়েরি লিরক্সা। মার্কসের ক্ষুরধার তরবারি তাঁর লেখা প্রকাশ করার জন্য সেখানেও উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তখন প্যারিস থেকে প্রকাশ হতো জার্মান পত্রিকা ঠঙজডঅজঞ । ঐ পত্রিকায় মার্কসের কয়েকটি জ্বালাময়ী প্রবন্ধ ও তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা ভাবনার রূপরেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি ধর্মীয় অনুশাষকদের প্রতি লিখলেন ‘ধর্ম মানুষের দুঃখ ভোলাবার জন্য স্বর্গে সুখের প্রতিশ্রুতি দেয় এ ছাড়া আর কিছু নয়, আফিমের মত মানুষকে ভুলিয়ে রাখার একটা কৌশল মাত্র’। দার্শনিকদের উদ্দেশ্যে লিখলেন, ‘তারা শুধু নানাভাবে জগতের ব্যাখ্যা করা ছাড়া কিছুই করেনি, আমরা শুধু ব্যাখ্যা করতে চাই না। চাই জগতকে পাল্টাতে’। এই লেখা প্রকাশের সাথে সাথে মার্কস সেখানেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেন। মার্কসের চাওয়ার সাথে সমাজের ওপর তলার মানুষের বৈষম্য দেখা দিল। কারণ তারা পৃথিবীর পরিবর্তন চায়না, নিজেদের সুখ, ভোগ-বিলাস রক্ষার ক্ষেত্রে সব দেশের অভিজাত ক্ষমতাবান মানুষরাই এক। মার্ক্স শোষক শ্রেণীর তীব্র সমালোচনার মুখে ফ্রান্স সরকার অবিলম্বে দেশ ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। মার্কস ফ্রান্সে ১৫ মাসের অবস্থা কালে পরিচয় হয়েছিল ফ্লেডারিক এঙ্গেলস এর সাথে। সেই পরিচয় পরবর্তী জীবনে এঙ্গেলস হয়ে ওঠে তার প্রিয় বন্ধু, সহকারী ও সহযোগী হিসেবে। রাজনৈতিক সকল বৈরিতার মধ্যেও সাহায্য করেছেন উদারহস্তে। এঙ্গেলস ছিলেন মার্কসের চেয়ে দু’বছরের ছোট, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো প্রগতিশীল। সরকারের এহেন আচরণে মার্কস প্যারীস ত্যাগ করে ব্রাসেলসে চলে আসতে বাধ্য হন। কিছু দিনের মধ্যেই এঙ্গেলস এসে মিলিত হয়। দু'জন মিলে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তাঁর কিছুদিন পর মার্কস ও এঙ্গেলস লন্ডনে ফিরে আসে। এখানে মার্কসে জার্মানি শ্রমিক সংঘের লন্ডন ও মাঞ্চেষ্টার (গধৎপযবংঃবৎ) শ্রমিক সংঘের সাথে পরিচয় হয়। মার্কস সেখানে তাঁর দ’ুবছরের প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বিভিন্ন শ্রমিক সংঘের সাথে যোগসূত্র গড়েতোলেন।

১৮৪৭ সালে লন্ডনে প্রথম শ্রমিক সংঘের অধিবেশন ডাকা হয়। এই অধিবেশনে শ্রমিক সংঘের বিধি ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। মার্কস ও এঙ্গেলস যৌথভাবে রচিত কমিউনিস্ট ম্যানিফোস্টো সভায় পেশ করে। এর প্রথম ধ্বনি (ইরৎঃয পৎু) এতে সমাজতন্ত্রের নীতি ও সংগ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়। তাতে শাসক শ্রেণি অনেকে ভয় দেখিয়েছিলেন। মার্কস শাসক শ্রেণীর ভয় দেখানোর জবাবে বলেছিলেন ‘শৃঙ্খল ছাড়া আমার হারাবার কিছু নেই, জয় করবার জন্য আছে সারা জগৎ’।

১৮৪৮ সালে মার্কস সমাজতন্ত্রের ইশতেহার প্রকাশ করেন। এই ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে সমস্ত ইউরোপে বিপ্লব শুরু হয়ে যায় । তখন শাসক শ্রেণীর বুক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠে । তাঁর পরর্বতী সময়ে মাকর্সকে সেখান থেকেও নির্বাসিত হয়ে বেলজিয়াম আসতে হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই বেলজিয়াম সরকারও দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে মার্কস ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। ১৮৪৯ সালে তিন সন্তান ও প্রিয়তমা স্ত্রী জেনিকে নিয়ে ইংল্যান্ডে এসে বাসা বাঁধলেন। সে সময় ইংল্যান্ড ছিলে সব দেশের নির্বাসিতদের আশ্রয়স্থল। মার্কস সর্বহারা মানুষের স্ব-পক্ষে লড়াই করতে করতে তিনি নিজেই সর্বহারা হয়েছেন । মার্কসের পাঁচ জনার সংসার অতঃপব জেনির গর্ভে আর একজন পৃথিবী আশার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। দু’কামরার একটা বাড়ি নিয়ে কোন মতে অনাহারে অধ্যহারে দিন যাপন করছেন। তখন পরিধান করা বস্ত্রের অবস্থা এমনি ছিল যে বাহিরে যাওয়ায় দুষ্কর। মার্কস একটা জামার অভাবে কতদিন বাহিরে যেতে পারেনি তাঁর ইযাত্তা রাখার কেই ছিলনা । অবুঝ শিশুরা বসে থাকে শূন্য হাড়ির সামনে। দোকানি ধারে মাল দেয়না। দেবে কি! নির্বাসিত মার্কস সবার কাছে অপরিচিত। অসহনীয় ভয়ংকর দারিদ্রের মধ্যে বাস করেও তিনি দায়িত্ব কর্তব্য থেকে একটুও বিচলিত হননি। তিনি ভাবতেন একটি মাত্র পরিবার তো নয়, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে পৃথিবীর কোটি কোটি পরিবার। তাদের শিশুদের মুখেও একমুঠো অন্য নেই। মার্কসের আদর্শবাদিতা এবং শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য প্রাণান্তর সংগ্রামের ইতিহান আজও মানব সভ্যতাকে নাড়া দেয়। আনমনা উদাসীনতায় লন্ডনের পথে পথে ঘুরেছেন। তাঁর অবস্থা মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। কিন্তু যখন তিনি কিছু বলতেন পাশের মানুষেরা মুগ্ধ হয়ে শুনতেন। নম্র বিনয়ী শান্ত মানুষটি চিন্তায় বুকে কেউ ছুরিকাঘাত করলে, মুহূর্তেই মানুষটি যুক্তি ঝলসে উঠতো। কোন দয়া নেই, করুণা নেয়, আপোষহীন অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেনি।

১৮৫২সালে মার্কসের মেয়ে ফ্রাননিসকা ব্রস্কাইটিসে বিনা চিকিৎসায় তিনদিন ভুগে মারা যায়। জেনি তার সোনামনির ছোট্ট দেহটাকে পাশের ঘরে শুইয়ে রেখেছিলো। প্রিয় সন্তানের মৃত্যু হয় তখন মার্কসের ঘর একেবারে শূন্য। সেদিন এক ফরাসি উদ্বান্তু দয়া করে দু’পাউন্ড দিয়েছিলেন। ঐ অর্থ দিয়ে একটা কপিন কিনে মোনামনির শেষকৃত্য করেছিলেন। ফ্রানসিসকা যখন পৃথিবীর আলোর মুখোমুখি হয়েছিল, তখন একটা দোলনা দিতে পারেনি। মার্কস মৃত্যু কালেও তার জন্য একটা শবাধার দিতে ব্যর্থ হন । মার্কসের ছয়টি সন্তান ছিলেন, তাঁর মধ্যে তিনটি সন্তানই অনাহারে বিনা চিকিৎসায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। এমন দুঃখ যন্ত্রণাময় জীবন পৃথিবীর আর কোন সাহিত্যিক ও দার্শনিকের জীবনে ঘটেছে, এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মার্কসের গৃহে দারিদ্র, ক্ষুধা ও অসুস্থতা ছিলো চিরস্থায়ী সঙ্গী। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, দার্শনিক ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী তিনি সৃষ্টি করেগেছেন নতুন ইতিহাস। সেই মানুষটি সংসারের জন্য দু’মুঠো অন্ন জোগাতে পারেনি। তিনি নতুন বিশ্ব সৃষ্টির কাজে হাত দিয়েছিলেন। তখনকের সময়ে উপলব্ধি করার মত মানুষ খুবই কম ছিলো। এঙ্গেলসই অকৃপণ হাতে মার্কসকে সারা জীবন পাশে থেকে সাহায্য করেছেন। এমন অনেক দিন দেখা গেছে এঙ্গেলসের টাকা পাওয়ার পরে বাজারে গিয়ে মার্কস ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবার এনেছে। মার্কস এঙ্গেলসের সাহায্যে কথা ভেবে মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে যেতেন। এঙ্গেলসকে লিখেছিলেন তাঁর অসহনীয় যন্ত্রণার কথা। এঙ্গেলস বলেছিলে আমার এ সাহায্য মানুষের মুক্তি আন্দোলনের জন্য, কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। এই নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে থেকেই পৃথিবীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেছিলেন কমিউনিজম আন্দোলনের প্রচার । বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নেতারা এসে দেখা করে। শ্রমিক নেতাদের নিয়ে শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলেন। ১৮৭৩ সালে শ্রমিক সংঘ ভেঙে যায়। তাঁর পর থেকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন, নিজের মতকে প্রকাশ করেন।

মার্কসের চিন্তা দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল হেগেল দর্শন। হেগেল বার্লিন বিশ্ব বিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক। মার্ক্স বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পাঁচ বছর আগেই হেগেল মারা যান। ফরাসি বিপ্লবের ব্যর্থতা ও নিপোলিয়নের জার্মাল আক্রমণের জন্য জার্মানির মানুষ রুসো, ভলতেয়ার পরিবর্তে হেগেলকেই আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। মাকসের্র দর্শন সমাজ ব্যবস্থার চালিকা শক্তি হচ্ছে অর্থনীতি আর যাদের হাতে যত উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চিত থাকবে তারাই হবে সমাজের ক্ষমতাবান প্রভু। তাই তাঁর এই ভাবনাকে প্রকাশ করলেন ড্যাশ ক্যাপিটাল (উধং ঈধঢ়রঃধষ) গ্রন্থে। এতে ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন। ১৮৬৭ সালে ড্যাশ ক্যাপিটাল গ্রন্থ প্রকাশিত ও পরবর্তী দুটি খণ্ড তাঁর মৃত্যুর পর এঙ্গেলস সম্পাদনায় প্রকাশ করেন।

মার্কসের স্বাস্থ্য ক্রমশই ভেঙে পড়েছে। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন। কিন্তু বিশ্রাম বাক্যটি মার্কসের জীবনে কখনোই আসেনি। জেনি কিছুদিন যাবত বেশ অসুস্থ । ১৮৮১ সালে ২ ডিসেম্বরে বুকে ক্যান্সারে মার্কসের সুখ দুঃখের চিরসাথীর চির বিদায় ঘটে গেল। মার্কস আরো কালবিহবল হয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন । জেনির স্মৃতি বুকে তির বৃদ্ধ করতে ছাড়েনা। পুরা একটা বছর এ দেশ থেকে ও দেশে ছুটেছেন বুকের অবর্ণনীয় যন্ত্রণাকে লাঘবের জন্য। ১৮৮৩ সালে বড় মেয়ে মারা গেলেন, মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন মার্কস। বাড়িতে ফিরে এলেন অসুস্থ হয়ে । ডাক্তার সাধ্যমতো চিকিৎসা দেয়, স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে ১৮ মার্চ ১৮৮৩ সালে ৬৬ বছর বয়সে চিরবিায় নিলেন তাঁর সংগ্রামী জীবন থেকে। মার্কসের মৃত্যুতে যে সারা পৃথিবী ও ইতিহাস বিজ্ঞান অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে আজও তা সারা বিশ্ব অনুভব করে। মার্কস যে সমাজ, অর্থনীতি, ইতিহাস বিকাশের নিয়ম আবিষ্কার করেছিলেন, মতাদর্শনের এতদিন লুকিয়ে রাখা যে রাজনীতি, বিজ্ঞান, কলা, ধর্ম, ইত্যাদি চর্চা করার আগে প্রথম চাই খাদ্য ও বস্ত্র। তিনি শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষের জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করে গেছেন। বর্তমান পুজিবাদের উৎপাদন পদ্ধতি এবং পদ্ধতি বুর্জোয়া সমাজ সৃষ্টি করেন, তার গতির বিশেষ নিয়মটি মার্কসই আবিষ্কার করেন।
বর্তমান সমাজেও পুজিবাদের করাল গ্রাসে আজ জর্জারিত। মার্কস কোন কিছু পরওয়া না করে দারিদ্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে আপোসহীন যুদ্ধ করে গেছেন। আজ সময় এসেছে আসুন আমরা মার্কসের জীবনাদর্শের ধারাকে গতিশীল করে তুলি। নিপীড়িত মানুষের জন্য আগামী সুন্দর পৃথিবী রেখে যায়।

menu-circlecross-circle