শাহেদ আলী
বার পড়া হয়েছে
প্রকাশিত :
আগস্ট ২৭, ২০১৯
শেয়ার :
লেখক তালিকানির্দেশিকাশর্তাবলী
শাহেদ আলী

শাহেদ আলীর অপ্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ

কথাশিল্পী শাহেদ আলী তার সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতাও রচনা করেছেন। যা তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। সেই অপ্রকাশিত কবিতা থেকে কয়েকটি কবিতা ‘শাহেদ আলীর অপ্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ’ শিরোনামে প্রকাশ করা হলো।

নিয়তি

ধাতব মনের হীরাকাটা ধাহর চিত্ত
কেটে কুচিকুচি, শংকা কিসের আর
হওনা পাষানী, ধুকে এ কপাল নিত্য
করবো বুকের যন্ত্রণা সংহার।

প্রস্তরে মাথা ধুকে পাই যন্ত্রণা
সমাজের দাস, তবু মুক্তির সাধ
রক্তে আমার আনে মহা মন্ত্রণা
প্রলয় তুফানে ছিন্ন ঘরের ছাঁদ।

নিয়তির লিপি থির বিদ্যুৎ লিখা
আকাশের গায়ে-বিচ্ছেদ অনিবার্য;
তবু প্রোজ্জ্বল হৃদয় অগ্নি শিখা,
মৃত্যু জেনেও মরণে করে না গ্রাহ্য।

তুমি

তোমার দেহের লাবণ্যে ধরা পেয়েছি ‘খুবি’
সমুদ্র জলে ধোওয়া সু-শুভ্র উজল ‘রুবি’।

তোমার চলার ছন্দে জগৎ নৃত্য পরা
তব নিস্কাশে জাগে বসন্ত মৃত্যু হরা

তব সলজ্জ হাস্যে উছলে স্বর্গ সুধা
জড়িত তোমার আঁখি পল্লবে প্রণয় সুধা

তোমার চোখের আলোকে উজ্জ্বল আঁধার ধরা,
তব কণ্ঠের রাগিনীতে দূর ক্লিন্ন জরা

পবিত্র তব হৃদয়-রঙে আকাশ নীল
তব জোয়ানীর সুরভি স্নিগ্ধ এই নিখিল।

দেহ- জ্যোতি

মৌনবতী গো ধবধবে শয্যায়
অংগ রেখো দূর হিংলাজ যাত্রী! (আপনার মনে পড়ছে এ কোন গ্রন্থ?)
পাপড়ি-নরম আলোকের বন্যায়
ভাসে কী যে সুখ, ঘনায়ে এলো যে রাত্রি। (মুখময় ভাসে শান্তি যে অফুরন্ত)

আঁধারে যদিও মগ্ন বর্হিবিশ্ব
লক্ষ সিতারা তবু আসমানে জ্বলে
তবু চিলে-কোঠা, একি অপরূপ দৃশ্য
সয়লাব যেন বিজলী আলোর ঢলে।

হেরি মুহূর্তে মানিলাম বিস্ময়
রুশ্নির মাঝে আলোর মূর্তি হেন
বসে আছো তুমি সুঠাম অংগময়
জোছনার ঢেউ নৃত্য করিছে যেন।

বংকিম গ্রীক বেকায়ে চাহিলে আর
নয়নের তারা মুহূর্তে টলোমলো
তোমার দেহের জেগতিতে অন্ধকার
বিতাড়িত তাই, চিলেকোঠা ঝলোমলো।

নির্জন মেঘ

কুল্বিত চুলের ঢেউ বুকে পিঠে ছড়িয়ে এলিয়ে
শাদা বুটিদার শাড়ি তনু অংগে জড়িয়ে পেঁচিয়ে
আজ তুমি বসেছিলে ভোরবেলা পড়ার টেবিলে
সমুখে জানালাখানি নিজ হাতে খুলে দিয়েছিলে
উন্মনা ভ্রমর সম ঘুরে ঘুরে মুগ্ধ সূর্যকর
চুম্বন করিতে ছিলো দেহতর, আনন্দ মুখর।

দুয়ারে দাঁড়ায়ে তব মুখপানে চেয়ে অকস্মাৎ
বিদ্যুৎতের ক্ষিপ্রতায় কে যে এলো সুখের ধ্রুপতি
আমার বুকের মাঝে, দেখিলাম সৌন্দর্য প্রতিমা
জানিছো আলোর মাঝে, মুখে তব সূর্য অরুনিমা
তোমার দেহের জেগতি হাসিতেছে চিলেকোঠা ভরি
তার মধ্যে ভেসে আছো অবাস্তব কল্পনা আধারী।
বিচ্ছুরিদে দেহ থেকে নরম নরম আলো কণা
তোমারে ঘিরে যেন সংগীতের অব্যক্ত মূর্ছনা!
সুস্মিত আনন তুমি মোর প্রাণে তাকালে যখন,
পড়িলো না চক্ষে পাতা, নির্নিমেষ ফেলিয়া নয়ন
চাহিনু তোমার পানে, বারবার বাক্যহীন সুখ
কী এক ব্যথায় ফের পরিপূর্ণ হয়ে গেলো বুক!

পীরিতি

পীরিতের শেল বুকে যার কলংক তার অলংকার
কুল মানের ভয় নাই রে তার;
পীরিতের নয় নিশানি,সদায় থাকে উদাসিন গো-
ওগো চে’রা মলিন থাকে তার
দিবানিশি বে-কারার।
ক্ষুদা নিদ্রা নাই তার মনে, জলধারা দুই নয়নে গো-
ছির ঘোরে প্রেম ধুন্দে-দিবানিশি ইন্তেজার।
হাসি-খুশি নাই তার মনে, সদায় থাকে ঘোর নয়নে গো-
ওগো লাজ ভয় নাই তার-কলঙ্ক তার অলঙ্কার!
প্রথম পীরিতে মজা দ্বিতীয় পীরিতে সাজা গো-
তারা কেওরের কথা নাহি শুনে, কেবল বন্ধু বন্ধু সার।

মন

মনরে বেলা গেল সন্ধা হইল, ভূলিয়া রইলাম কারে দেখি;
সঙ্গের সাথীরা সবাই দিয়ে যায়রে ফাঁকি।
মনরে হুশ, গেল বুদ্ধি গেল, চোখের গেল জ্যোতি,
কারে লইয়া করবাও তুমি এইভাবে বসতি।
মনরে আক্কেল ফইম গেল, তনটির গেল বল,
কও তো দেখি পাগল মন আর কি বা সম্বল ?
মনরে ভবে আইচায় বেপারেতে লইয়া পরধন,
সব খোয়াইলাম তরে, এখন কি নাইয়া গমন ?
মনরে স্ত্রী-পুত্র ভাই বন্ধু কেউ না যাবে সঙ্গে,
বিপাকে ঠেকিয়া কাঁন্দে ফকির জী অলঙ্গে।

menu-circlecross-circle